মঙ্গলবার । ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ১লা আশ্বিন, ১৪৩২

আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন: মুসলিম বিশ্বে ন্যাটোর আদলে সামরিক বাহিনী গঠনে মত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কাতারের রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা এক শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানোর ব্যাপারে একমত হয়েছেন। কেউ কেউ আরব বিশ্বের নিরাপত্তা রক্ষায় ন্যাটোর আদলে ‘সম্মিলিত নিরাপত্তা বাহিনী’ গঠনের আহ্বানও জানিয়েছেন। রোববার ও সোমবার আরব লীগ এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলো ‘আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে’ মিলিত হয়। এতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণে একটি প্রস্তাব পাস হয়। তাতে বলা হয়, ইসরায়েলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

গত ৯ সেপ্টেম্বর হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে কাতারে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কাতারসহ মুসলিম বিশ্ব নড়েচড়ে বসে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সভায় জোরালে বক্তব্য তুলে ধরেন।

সম্মেলনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন স্পষ্ট। তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্বাসঘাতকামূলক ও কাপুরুষোচিত। তারা গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য আলোচনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।

ওইআইসির মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার এখনই সময়। আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত ইসরায়েলকে একটি ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সম্প্রদায়ের জন্য ন্যাটোর আদলে প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এই অঞ্চলের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আহ্বান জানান।

ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
কাতারে হামলা ও ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধনের জন্য ইসরায়েলকে সম্মিলিতভাবে জবাবদিহির আওতায় আনতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার কাতারে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ডাকা জরুরি আরব-ইসলামি সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

দোহায় অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে এই নির্জলা আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং এ ধরনের সমস্ত অবৈধ কর্মকাণ্ড অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাতে হবে। সেখানে তৌহিদ হোসেন বলেন, কাতারের সার্বভৌম ভূখণ্ডে ইসরায়েলের এই বিনা উস্কানির ও অযৌক্তিক হামলা কেবল কাতারের উপর আক্রমণ নয়, বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর মর্যাদার প্রতি অবমাননা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মনে করে এ আগ্রাসন ইসরায়েলের বেপরোয়া অভিযানের অংশ, যারা অব্যাহতভাবে জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইন এবং জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবের অশ্রদ্ধা করে চলেছে। ইসরায়েলের পরবর্তী কোনো উস্কানি ও আগ্রাসন প্রতিরোধে সকল ওআইসি দেশের সমন্বিত কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ, বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

আরব ও ইসলামী দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: ইরান

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি জোরদার করা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কেবল একটি স্পষ্ট বিকল্প আছে, তা হলো ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত রেখে দাঁড়ানো। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, সব মুসলিম ভাই ভাই। তাই আমাদের একটি দেহের মতো থাকা উচিত।’

ইরানি নেতা বলেন, ‘গত জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল কেবল তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেনি, বরং আমাদের জনগণের মর্যাদাও লঙ্ঘন করেছে। আমাদের এই হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত। মুখ বুজে আর অন্যায় সহ্য করার সময় নেই। গাজায়, বৈরুত বা ইয়েমেনে যা ঘটেছে, তাতে চুপ থাকা উচিত নয়’। তিনি বলেন, ‘শুধু ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্য নয়, মানবতার ভিত্তিতে মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।’

এর আগে রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আরব দেশগুলো তাদের নিরাপত্তা রক্ষায় সম্মিলিত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এই বাহিনীতে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানও দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক।

রয়টার্স জানায়, আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের দিত খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কাতারের ওপর ইসরায়েলি হামলা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। দখলদার দেশটির কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন