Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
শুক্রবার । ২২শে আগস্ট, ২০২৫ । ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
‌বি‌বি‌সি বাংলার প্রতি‌বেদন

রাজার শাসন থেকে যেভাবে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল সিকিম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে, একেবারে মিডটাউন ম্যানহাটনের ফিফথ অ্যাভিনিউতে একটি দারুণ অভিজাত ও লাক্সারি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের নাম বার্গডফ গুডম্যান। ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর রাতে সেখানে সিকিমের রাজা ও রানির সম্মানে দারুণ জাঁকজমকে ভরা একটি ফ্যাশন শো ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে শহরের ডাকসাইটে সেলেব্রিটিরা সবাই আমন্ত্রিত ছিলেন।

অতিথিদের সেদিন বরণ করা হয়েছিল সিকিমের সাবেকি রীতিতে পশমি স্কার্ফ দিয়ে। ভেতরে তারা সিকিমের গানবাজনা শুনতে শুনতে শ্যাম্পেনে চুমুক দিচ্ছিলেন, আর বাইরে ম্যানহাটনের রাস্তা মুড়ে দেওয়া হয়েছিল সিকিমের পতাকায়।

সেটাই শেষ নয়, সিকিমের রাজা (চোগিয়াল) পালডেন থোন্ডুপ নামগিয়াল আর তার মার্কিন স্ত্রী, রানি (‘গিয়ালমো’) হোপ কুক এর পরের দুদিনও নিউ ইয়র্কের কলোনি ক্লাব আর ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টরিয়া হোটেলে একই ধরনের বিলাসবহুল পার্টি দিয়েছিলেন।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সেই সব রাজসিক পার্টির বিশদ বিবরণ দিয়ে লিখেছিল, “ফ্যাশনকে হাতিয়ার করে রানি আসলে তার দেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাইছেন!”

কথাটা ভুল নয় – কারণ হিমালয়ের কোলে ছোট পার্বত্য রাজ্য সিকিমের রাজা ততদিনে আঁচ করেছিলেন দিল্লি তাদের পুরনো নীতি থেকে সরে এসে সিকিমকে হয়তো ভারতের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে চাইছে।

সিকিমের আলাদা স্বাধীন সত্তা বজায় রাখার জন্যই তার আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন দরকার ছিল, আর এই কাজে তাকে পুরোদমে সাহায্য করছিলেন তার চেয়ে বয়সে আঠারো বছরের ছোট আমেরিকান স্ত্রী।

বস্তুত রাজা-রানির এই মার্কিন সফরের মাসকয়েক আগেই তারা চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে সিকিমের ওপর একটি তথ্যচিত্র কমিশন করেছিলেন – যিনি ততদিনে সিনেমার দুনিয়ায় একটি জগদ্বিখ্যাত নাম।

সেই তথ্যচিত্র বানানোর উদ্দেশ্যও ছিল সিকিম যে হিমালয়ের কোলে একটি স্বতন্ত্র ও অনন্য ভূখণ্ড, সেটাই তুলে ধরা। সত্যজিতের নির্মিত সেই তথ্যচিত্র বহু বহু বছর সাধারণ মানুষ দেখতে পাননি, সেটা অবশ্য অন্য গল্প।

যাই হোক, চোগিয়াল হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি নিউ ইয়র্কে তার সেই রাজসিক সফরের মাত্র তিন-সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই তার রাজত্বের পাকাপাকি অবসান ঘটবে – এবং সিকিম ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে!

১৯৭৫ সালের ১৬ই মে ঠিক সেটাই ঘটেছিল – যে ঐতিহাসিক ঘটনার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল মাসতিনেক আগেই। আজকের সিকিম সেই মাইলফলক উদযাপনও করলো মহাধূমধামে।

সিকিমে রাজতন্ত্রের অবসান ও ভারতের সঙ্গে সংযুক্তির পেছনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা সুবিদিত – কিন্তু সে আমলের পর্যবেক্ষকরা সবাই মানেন সিকিমের একজন জননেতা তথা রাজনীতিবিদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ কিছুতেই সহজ হতো না!

তিনি আর কেউ নন – কাজী লেন্দুপ দর্জি, নামের আদ্যক্ষর দিয়ে এলডি কাজী নামেও যিনি পরিচিত।

রাজাদের অধীনে চুকাংয়ের লেপচা জমিদার বা ‘কাজী’
এখনও তথাকথিত ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে নতি স্বীকার বা ভারতের কাছে দেশ ‘বিক্রি’ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ এলেই দক্ষিণ এশিয়ার নানা প্রান্তে যার নাম সবার আগে আসে – তিনিই সেই লেন্দুপ দর্জি, ‘স্বাধীন’ সিকিমের শেষ প্রধানমন্ত্রী, আর ভারতের অঙ্গরাজ্য সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী।

সিকিমের রাজার সঙ্গে দর্জির আজন্ম বিরোধ ও রাজনৈতিক সংঘাত, দুজনেরই বিদেশিনী স্ত্রীর ভূমিকা, পরে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সাহায্য ও ইন্দিরা গান্ধীর আশীর্বাদ নিয়ে সিকিমকে ভারতের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া এবং শেষ জীবনে সিকিমের বাইরে গিয়ে নিঃসঙ্গ মৃত্যু – লেন্দুপ দর্জির জীবন আসলে পলিটিক্যাল থ্রিলারকেও হার মানায়!

লেন্দুপ দর্জি আর চোগিয়ালের সাপে-নেউলে সম্পর্ক

লেন্দুপ দর্জি আর চোগিয়ালের সাপে-নেউলে সম্পর্ক
সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রথম চোগিয়াল যখন তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি শাসনের কাজে সুবিধার জন্য পুরো সিকিমকে বারোটি ইউনিটে ভাগ করেছিলেন – যার প্রতিটিকে বলা হত ‘জং’ (Dzong), আর এগুলোর দায়িত্বে ছিলেন এক একজন ‘কাজী’ (Kazi)।

মুঘল আমলের যেমন জায়গির আর জায়গিরদার, বস্তুত তারই সিকিমি প্রতিশব্দ ছিল জং আর কাজী।

এই কাজীদের মধ্যে আবার খুব প্রভাবশালী ছিলেন ‘খাংসারপা’ নামে একটি প্রাচীন লেপচা পরিবার, যারা ছিলেন দক্ষিণ সিকিমে ‘চুকাং’ জং-এর কাজী। লেন্দুপ দর্জি ছিলেন এই পরিবারেরই সন্তান।

চুকাং-এর কাজীদের এতই প্রতিপত্তি ছিল যে লেন্দুপ দর্জিকে (১৯০৪-২০০৭) খুব তরুণ বয়সেই সিকিমের সবচেয়ে বড় আর বিখ্যাত তিব্বতি মনাস্টারি রুমটেকের প্রধান নির্বাচিত করা হয়েছিল।

তবে এটা ছিল একটা স্টপগ্যাপ বা সাময়িক ব্যবস্থা। যুবরাজ পালডেন থোন্ডুপ নামগিয়াল (১৯২৩-১৯৮২) তখনও নাবালক, তার মাত্র দশ বছর বয়স হতেই লেন্দুপ দর্জিকে সরিয়ে যুবরাজকেই ১৯৩৩ সালে রুমটেক মনাস্টারির প্রধান ঘোষণা করা হয়।

২৯ বছরের তরুণ লেন্দুপ এতে অবশ্যই তীব্র অপমানিত বোধ করেছিলেন, যদিও তিনি পরে কখনও তা সরাসরি স্বীকার করেননি। তবে চোগিয়ালরা সেদিন থেকেই চিরতরে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষে পরিণত হন।

এখানে সিকিমের জাতিগত বিন্যাসটা একটু বোঝা দরকার – তিব্বত থেকে আসা লেপচা ও ভুটিয়াদের হাতে সিকিমের শাসনভার থাকলেও সেখানকার জনসংখ্যার সিংহভাগই কিন্তু ছিলেন নেপাল থেকে আসা অভিবাসীরা।

মানে লেপচা ও ভুটিয়ারা সমাজের সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত, এবং ভূস্বামী শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করলেও সিকিমের তিন-চতুর্থাংশ বাসিন্দাই ছিলেন গরিব ও সাধারণ নেপালি।

এখন সিকিমের রাজারা নেপালি অভিবাসীদের পছন্দ না করলেও চুকাং-এর কাজীরা কিন্তু নেপালিদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তার সবচেয়ে বড় কারণ, লেপচা হলেও নিজেদের জমিদারি বা এস্টেটে তারা নেপালি অভিবাসীদের জমি দিয়ে বসত করতেও উৎসাহ দিতেন।

এই এথনিক নেপালিদের সমর্থন নিয়েই ক্রমে ক্রমে চুকাং-এর কাজী লেন্দুপ দর্জি সিকিমের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন – এবং সরাসরি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে থাকেন।

থোন্ডুপ ও তার আমেরিকান রানি হোপ কুক
রাজ্য রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন ১৯৪০র দশক থেকেই – ১৯৪৫-এ তিনি গঠন করেন ‘সিকিম প্রজা মন্ডল’, ১৯৫৩তে সেই দলই সিকিম স্টেট কংগ্রেস আর ১৯৬২তে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস নামে আত্মপ্রকাশ করে – এবং রাজপরিবারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালাতে থাকে।

১৯৭৫ সালে সিকিমের ভারতভুক্তির আগের তিন দশক কাজী লেন্দুপ দর্জিই যে সেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই – কিন্তু তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার জন্য চোগিয়ালও কোনও চেষ্টাই বাদ দেননি।

ভারতের ‘প্রিন্সলি স্টেট’ বা ‘রাজন্য শাসিত রাজ্য’গুলোর ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘকাল গবেষণা করেছেন অক্ষয় চভন, তার কথায়, “এক কথায় বলতে গেলে সিকিমের রাজার ব্যক্তিগতভাবে কাজীর প্রতি একটা ‘প্যাথলজিকাল হেট্রেড’ বা চরম বিদ্বেষ কাজ করতো – যেটা বছরের পর বছর ধরে অসংখ্যবার নানা ঘটনায় সামনে এসেছে!”

“তবে সেই সঙ্গে এটাও বলার – এই ঘৃণা বা বিদ্বেষটা কিন্তু এতকরফা ছিল না, বরং ছিল পারস্পরিক!”

ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশ আর ‘র’ এর গোপন অপারেশন

ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশ আর ‘র’ এর গোপন অপারেশন
লেন্দুপ দর্জি সিকিমে যতই জনপ্রিয় হোন, চোগিয়ালদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বহুদিন তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি – যার প্রধান কারণ ছিল রাজতন্ত্রের প্রতি ভারতের সক্রিয় সমর্থন। ভারতের সে সময়ের নেতৃত্ব যে কোনও কারণেই হোক চেয়েছিলেন সিকিমের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি বজায় থাকুক।

ভারতের স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ রাজন্য শাসিত রাজ্য ‘বাইল্যাটেরাল ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’-এর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হলেও সিকিমকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল সিকিমকেও ভারতে মিশিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন – কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সে প্রস্তাবে সায় দেননি।

তার বদলে ১৯৫০ সালে দিল্লি সিকিমের রাজার সঙ্গে একটি চুক্তি করে তাদের ‘প্রোটেক্টোরেট’ মর্যাদা দেয় – মানে তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার সব দায়িত্ব নেয়। এর বদলে সিকিম তাদের বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, মুদ্রা, যোগাযোগ ব্যবস্থা আর ডাক বিভাগের ভার ভারতের হাতে তুলে দেয়।

সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার লিখে গেছেন, ১৯৬০ সালে পন্ডিত নেহরু তাকে বলেছিলেন, “সিকিমকে আমি জোর করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই না, কারণ সেটা মশা মারতে কামান দাগার মতো ব্যাপার হয়ে যাবে!”

কিন্তু ১৯৭১-র পর নেহরুর কন্যা ও তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই নীতি বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।

ততদিনে বাংলাদেশ যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সমর্থনে চীনের ফৌজ সিকিমের ঠিক উত্তরে চুম্বি ভ্যালি পর্যন্ত চলে এসেছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।

এর কয়েক বছর আগে আর একটা ঘটনা ঘটে, ভারতের আর এক ‘প্রোটেক্টোরেট’ ও সিকিমের প্রতিবেশী ভুটান ১৯৬৮ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়ে যায় – যা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠা করে। ইন্দিরা গান্ধী চাননি ভুটানের দেখাদেখি সিকিমও একই রাস্তায় হেঁটে ভারতের অস্বস্তি বাড়াক।

এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ ‘সিকিম : ডন অব ডেমোক্রেসি’ বইতে খুব বিশদে লিখে গেছেন ‘র’ এর সাবেক প্রধান জিবিএস সিধু, যার ওই কর্মকাণ্ডে খুব বড় একটা ভূমিকা ছিল।

তিনি জানাচ্ছেন, ‘৭২ সালের শেষ দিকে ইন্দিরা গান্ধী তখনকার ‘র’ প্রধান আর এন কাও ও তার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি এন হাকসারকে ডেকে পাঠিয়ে সিকিমের রাজার লেখা একটি চিঠি দেখান, যাতে চোগিয়াল নিজেকে ‘হিজ ম্যাজেস্টি’ বলে সম্বোধন করেছেন।

এই সম্বোধন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধানরাই কেবল ব্যবহার করে থাকেন।

চিঠিটা দেখিয়ে মিসেস গান্ধী তার গোয়েন্দা প্রধানকে জিজ্ঞেস করেন, “এই ব্যাপারে কিছু কি করা যায়?”

আর এন কাও দু’সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু মাত্র দিন দশেকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফেরত এসে তিনি জানালেন, ‘হ্যাঁ, সম্ভব।”

এরপরই শুরু হল অপারেশন সিকিম, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল ভারতের সঙ্গে সংযুক্তিই হবে এই মিশনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

দর্জির সঙ্গে হাত মেলালেন ভারতীয় গোয়েন্দারা

খুব গোপনে এরপর সিকিমের গণতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে একজোট করার কাজ শুরু হল, তাদের বোঝানো হল যে ভারত আর চোগিয়ালকে সমর্থন করবে না। এখান থেকেই কাজী লেন্দুপ দর্জির সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেসকে ভারতের আর্থিক ও অন্য সব ধরনের সাহায্য যোগানো শুরু হল।

পাশাপাশি চোগিয়ালকেও এই ভুল ধারণার মধ্যে রাখার চেষ্টা হল যে নির্বাচন হলেও এখনও একটা আপষ রফা সম্ভব। ভারত যে শেষ পর্যন্ত সিকিমের সংযুক্তি চাইছে সেটা তাকে ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেওয়া হয়নি।

জিবিএস সিধু লিখেছেন, “আমার ওপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল কাজীর দলকে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা এবং তারা যাতে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ আসন পায় সেটা নিশ্চিত করা।”

শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪র ১৫ই এপ্রিল ভারতের নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে সিকিমে যে ভোট হলো, তাতে লেন্দুপ দর্জির সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টিতেই জিতলো।

কাজী হলেন সিকিমের নির্বাচিত ‘প্রধানমন্ত্রী’ – তবে তার সরকার ভারতের সঙ্গে ‘অধিকতর সহযোগিতা’ চেয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যেই বিল আনলো – চোগিয়াল যার ঘোরতর বিরোধিতা করেছিলেন।

এর পর সিকিমের ভারতের সঙ্গে সংযুক্তি ছিল নেহাত সময়ের অপেক্ষা – ১৯৭৫ সালের ১৬ই মে সব আনুষ্ঠানিকতার শেষে সিকিম অবশেষে ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।

এর আগে ওই বছরেরই ১০ই এপ্রিল লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বে সিকিমের আইনসভা দুটি প্রস্তাব পাস করে – একটি ভারতের সঙ্গে ‘পূর্ণ সংযুক্তি’ চেয়ে, আর দ্বিতীয়টি চোগিয়ালের অপসারণ দাবি করে।

১৪ এপ্রিল সিকিমে একটি গণভোটও অনুষ্ঠিত হয় – যাতে ৯৭.৫৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে এই দুটো প্রস্তাবই গৃহীত হয়।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, লেন্দুপ দর্জির নামের সঙ্গে ‘ভারতীয় এজেন্ট’ পরিচয়টা এক রকম সেঁটে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো তিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে প্রায় খোলাখুলি ভারতীয় গোয়েন্দাদের ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সাহায্য নিয়েছিলেন।

তখন চোগিয়ালের এডিসি ছিলেন ক্যাপ্টেন সোনাম ইয়ংডা, তিনি পরে দাবি করেছেন রাজপ্রাসাদের সামনে সে সময় যে বিক্ষোভগুলো হতো, তাতে ভারতীয় সৈন্যরা লুকিয়ে সিভিল ড্রেস পরে এসে অংশ নিত!

তার মতে, গণভোটের ফলও ভারতের কারসাজিতেই ব্যাপকভাবে ‘রিগ’ করা হয়েছিল।

তবে লেন্দুপ দর্জির পেছনে সিকিমের গরিষ্ঠ অংশের মানুষের, বিশেষ করে নেপালি বংশোদ্ভুতদের যে ব্যাপক সমর্থন ছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। চোগিয়ালের রাজত্বে এই নেপালিরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত ছিলেন।

যে কারণে কাজীর সমর্থকরা এখনও বলে থাকেন তিনিই সিকিমকে রাজতন্ত্রের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং সব নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।

তারা যুক্তি দেন, এই প্রক্রিয়ারই ‘স্বাভাবিক পরিণতি’ ছিল ভারতের সঙ্গে সংযুক্তি – যদিও সেটা কখনোই কাজীর আন্দোলন বা রাজনৈতিক দর্শনের মূল কথা ছিল না!

রাজা ও রাজনীতিবিদের দুই বিদেশিনী স্ত্রী

কাজী লেন্দুপের স্ত্রী ছিলেন বেলজিয়ান অ্যারিস্টোক্র্যাট এলাইজা-মারিয়া ল্যাংফোর্ড রাই, যিনি কাজীর স্ত্রী হিসেবে সিকিমে ‘কাজীনী এলাইজা মারিয়া’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

এডিনবরা ইউনিভার্সিটির আইনের স্নাতক এলাইজা মারিয়া বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে বার্মায় চলে এসেছিলেন, তার প্রথম স্বামী ছিলেন স্কটিশ। পরবর্তী জীবনে বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েল বার্মায় থাকাকালীন এই বিদুষী নারীর প্রেমে পড়েছিলেন, যদিও সেই সম্পর্ক পরিণতি পায়নি।

এলাইজা মারিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদের পর কাজীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়, দু’জনে দিল্লিতে বিয়ে করেন ১৯৫৭ সালে। অক্ষয় চভন জানাচ্ছেন, বিয়ের পর থেকেই কাজীনীর স্বপ্ন ছিল তিনি একদিন সিকিমের ‘ফার্স্ট লেডি’ হবেন।

কাজীনী থাকতেন সিকিম সীমান্তের ঠিক বাইরে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার কালিম্পংয়ে, আর সেখানে বসেই চোগিয়াল, যুবরাজ আর সিকিমের রাজদরবারকে ক্ষুরধার ভাষায় আক্রমণ করে বিভিন্ন খবরের কাগজ ও আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখালেখি করতেন।

সিকিমের রাজপরিবারের বিরুদ্ধে ভারতে জনমত তৈরিতে কাজীনী এলাইজা মারিয়ার একটা বড় ভূমিকা ছিল। স্বামীর রাজনৈতিক দলকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ও তাদের আন্দোলন সংহত করার জন্যও তিনি দারুণ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতেন।

কাজীর সঙ্গে বিয়ের ছ’বছর পর কাজীনী আক্রমণ করার জন্য চোগিয়ালের পাশাপাশি এক নতুন প্রতিপক্ষকে পেলেন – তিনি আমেরিকান সোশ্যালাইট হোপ কুক!

নিউ ইয়র্কের এক অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে হোপ কুক হিমালয় নিয়ে গবেষণা করতে ভারতে একটি স্টাডি ট্রিপে এসেছিলেন ১৯৫৯ সালে। তখন তার বয়স মাত্র উনিশ।

সে সময় দার্জিলিং-এর হিমালয়ান হোটেলে সিকিমের যুবরাজ থোন্ডুপের (যিনি পরে চোগিয়াল হবেন) সঙ্গে তার আলাপ হয়। যুবরাজের প্রথম স্ত্রী তার বছরদুয়েক আগেই মারা গেছেন, অতঃপর সেই পরিচয় প্রণয়ে রূপ নিল।

এরপর ১৯৬৩ সালে জওহরলাল নেহরুর সম্মতি নিয়ে যুবরাজ থোন্ডুপ ২২ বছরের তরুণী হোপ কুককে বিয়ে করলেন। মার্কিন সোশ্যালাইট প্রবেশ করলেন তার হিমালয়ান সাংগ্রিলায়।

সেই বিয়ের অল্প কয়েকদিন পরেই থোন্ডুপের পিতা তাশি নামগিয়াল প্রয়াত হলেন, ফলে নতুন চোগিয়াল হিসেবে সিংহাসনে অভিষেক হলো থোন্ডুপের, আর তার স্ত্রী হোপ কুক হলেন নতুন ‘গিয়ালমো’ (রানি)।

আমেরিকান এই গিয়ালমো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র চর কি না, তা নিয়ে যথারীতি ভারতে প্রবল গুঞ্জন আর জল্পনা শুরু হয়ে গেলো।

পরে ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের বইতে অনেকেই লিখেছেন হোপ কুকের সঙ্গে সিআইএ-র সংস্রবের কোনও প্রমাণই মেলেনি, কিন্তু সেই শীতল যুদ্ধের যুগে ভারতের আমজনতা তখন কিন্তু তা আদৌ বিশ্বাস করেনি।

চোগিয়াল ও তার নতুন রানি মাঝে মাঝেই বিশ্ব পরিক্রমায় বেরোতেন – যে সফরগুলোর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল একটি স্বাধীন সিকিমের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনসংযোগ। প্রতিবেদনের শুরুতেই আমরা নিউ ইয়র্কে যে ফ্যাশন শো-র কথা উল্লেখ করেছি, সেটাও ছিল এরকমই একটি ‘পি আর এক্সারসাইজ’।

এর মাঝে ১৯৬৬ সালে ‘বুলেটিন অব টিবেটোলজি’তে একটি নিবন্ধ লিখে গিয়ালমো হোপ কুক দাবি জানালেন, ভারতের উচিত দার্জিলিং-কে আবার সিকিমের হাতে ফেরত দেওয়া – যে বক্তব্য নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টেও তোলপাড় পড়ে গেল।

পরের বছর স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় চোগিয়াল সিকিমের বাছাই করা বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে ‘স্টাডি ফোরাম’ নামে একটি কমিটি তৈরি করলেন – যাদের কাজই ছিল স্বাধীন সিকিমের পক্ষে জনমত তৈরি করা। ভারত যথারীতি হোপ কুককে তখন থেকেই সন্দেহের চোখে দেখছিল।

দিল্লির ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো যখন ১৯৬৮তে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে গ্যাংটকের রাস্তায় ‘ভারতীয়রা সিকিম ছাড়ো’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্কুলের বাচ্চারা মিছিল করলো। গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিলেন, এই মিছিলের পরিকল্পনা হোপ কুকেরই মস্তিষ্কপ্রসূত।

ফলে কাজীনী যখন স্বামীর পথে সামিল হয়ে সিকিমকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার পথে এগোচ্ছেন, সিকিমের বিদেশিনী গিয়ালমো কিন্তু তার সাংগ্রিলার স্বাধীনতার জন্যই লড়াই চালাচ্ছিলেন।

ইতিহাস বলে এই লড়াইতে শেষ হাসি কাজীনীই হেসেছেন।

তবে সিকিমের ভারতভুক্তির প্রায় বছর দেড়েক আগেই রানি হোপ কুক নিজের সন্তানদের নিয়ে চিরতরে আমেরিকায় ফিরে যান – এরপর আর কখনো তিনি সিকিমে পা রাখেননি।

ভারতীয় সেনা তার প্রিয় রাজপ্রাসাদে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছে, এ দৃশ্যও তাকে দেখতে হয়নি।

অন্য দিকে কাজীনী এলাইজা মারিয়া জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লেন্দুপ দর্জির পাশেই ছিলেন। নিঃসন্তান এই দম্পতি শেষ জীবনে থাকতেন কালিম্পং-এ, সেখানেই ১৯৯০ সালে কাজীনী প্রয়াত হন।

শেষ জীবনে কি অনুশোচনার গ্রাসে?

কাজী লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হলেও তার সেই ক্ষমতা কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৯তে সিকিমের পরের নির্বাচনে তার দল এসএনসি একটিও আসন পায়নি, মুখ্যমন্ত্রী হন নেপালি জনজাতি থেকে উঠে আসা এক নতুন নেতা নরবাহাদুর ভান্ডারী।

দর্জির সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের কার্যত সেখানেই ইতি। কয়েক বছর পর একবার সিকিমের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে তিনি দেখেন ভোটার তালিকায় তার নামই নেই!

ততদিনে তিনি সস্ত্রীক সিকিম লাগোয়া কালিম্পং-য়ে ‘চুকাং হাউজ’ নামে একটি বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেছেন, যেটির নামকরণ করা হয়েছিল তাদের পুরনো জমিদারির নামে।

১৯৯০তে স্ত্রীর মৃত্যুর পর জীবনের শেষ সতেরো বছর তিনি সেখানেই একাকী নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন। দেখাশুনোর জন্য পুত্র-পরিজন বা আত্মীয়স্বজন কেউ ছিল না, তিনি নিজেও সিকিমের সঙ্গে সব যোগাযোগ কার্যত ছিন্ন করে ফেলেছিলেন।

মৃত্যুর বছর চারেক আগে ভারত সরকার অবশ্য তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘পদ্মবিভূষণে’ সম্মানিত করেছিল। ২০০৪ সালে সিকিম রাজ্য সরকার দিয়েছিল ‘সিকিম রত্ন’ সম্মানও।

কিন্তু শেষ জীবনে তার প্রতি ভারত সরকারের মনোভাব নিয়ে তিনি যে রীতিমতো ব্যথিত ও আশাহত ছিলেন, এটা কোনও গোপন কথা নয়।

১৯৯৬ সালের নভেম্বরে তিনি নেপালের জনপ্রিয় দৈনিক কান্তিপুর টাইমসের সম্পাদক সুধীর শর্মাকে একটি সাক্ষাতকার দেন, যাতে তিনি দিল্লির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ ও আশাভঙ্গের বেদনা উগরে দিয়েছিলেন।

সুধীর শর্মা পরে লিখেছেন, “কাজ শেষ হওয়ার পরে ভারত যে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে এটা লেন্দুপ দর্জি দিব্বি বুঝেছিলেন!”

“আমার কাছে তিনি আক্ষেপ করেছিলেন আগে দিল্লি গেলে লাল কার্পেট বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হতো, প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে লম্বা লম্বা বৈঠক করতাম।”

“আর আজকাল দিল্লিতে গেলে দ্বিতীয় সারির নেতা-মন্ত্রীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে হয়!”

আর তার বিরুদ্ধে যে নিজের দেশ বিক্রি করার অভিযোগ, সেটা নিয়ে লেন্দুপ দর্জি কী বলতেন?

সুধীর শর্মা জানাচ্ছেন, “ওই রেকর্ডেড ইন্টারভিউতে তিনি আরও বলেছিলেন আমি জানি অনেকেই বলে আমি নাকি বিশ্বাসঘাতক, আমি নাকি সিকিমকে বেচে দিয়েছি।”

“তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই অভিযোগটা সত্যি, তাহলেও বলবো সিকিমের আজকের এই অবস্থার জন্য আমি একাই কি দায়ী?”

ইঙ্গিতটা যে ছিল তার সারা জীবনের ‘নেমেসিস’ চোগিয়ালের ‘অপশাসনে’র দিকে, তা বুঝতে অবশ্য অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

ঘটনাচক্রে সিকিমের শেষ চোগিয়াল পালডেন থোন্ডুপ নামগিয়ালের অন্তিম জীবনও কিন্তু শান্তিতে কাটেনি।

স্ত্রী আগেই ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, রাজ্যপাট হারানোর তিন বছরের মধ্যেই তার প্রথম পক্ষের সন্তান, কেম্ব্রিজে শিক্ষিত যুবরাজ তেনজিং নামগিয়ালও গ্যাংটকে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

এর চার বছর পর মাত্র ৫৮ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে‍ ক্যান্সারে ভুগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিকিমের শেষ রাজা। তারও আড়াই বছর পর দিল্লিতে নিজের শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারান প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

কাজী লেন্দুপ দর্জি অবশ্য শতায়ু ছিলেন, কালিম্পংয়ের বাসভবনেই তিনি ২০০৭ সালে ২৮শে জুলাই ১০৩ বছর বয়সে মারা যান। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সিকিমের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং বলেন, কাজীসাহেবকে দেখেই তিনি সিকিমের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।

মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর সিকিমের রুমটেক মনাস্টারিতেই কাজী লেন্দুপ দর্জির অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়, একদিন যে মঠের প্রধানের পদ থেকে তাকে সরে যেতে হয়েছিল।

কিন্তু আজকের সিকিম কি আদৌ মনে রেখেছে সেই রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীকে, যার হাত ধরে এই পার্বত্যভূমির ভারতে সংযুক্তির পথ প্রশস্ত হয়েছিল?

গ্যাংটকের প্রবীণ অধ্যাপক বিধুবিনোদ ভান্ডারীর বলতে দ্বিধা নেই, এই প্রজন্মের সিকিমিজরা অনেকে হয়তো কাজী লেন্দুপ দর্জির নামই শোনেনি!

“কিন্তু আর কিছু না হোক, অন্তত একটা কারণে আজকের সিকিমেরও তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত – আর সেটা হল তার অনুরোধেই কিন্তু ভারত সরকার সিকিমের বাসিন্দাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে আয়কর থেকে রেহাই দিয়েছিল”, জানাচ্ছেন তিনি।

গোটা ভারতের মধ্যে একমাত্র সিকিমের অধিবাসীদেরই আজও তাদের উপার্জনের ওপর কোনও আয়কর দিতে হয় না – আর দিল্লির এই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজী লেন্দুপ দর্জির একটা বড় অবদান ছিল।

যে রাজনীতিবিদকে প্রায় সারা জীবন নিজের মাতৃভূমিকে বিদেশি শক্তির কাছে বেচে দেওয়ার অভিযোগ শুনতে হয়েছে, তার প্রাপ্তির ঘরে এটুকুই বা কম কী!

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন