সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের গৃহহীনবিষয়ক মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। নিজের মালিকানাধীন একটি টাউনহাউস থেকে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করে ভাড়া একলাফে ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিট বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রুশনারা আলীর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার বেথনালগ্রিন ও স্টেপনি আসন থেকে তিনি পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের ওই আসনে ২০১০ সাল থেকে টানা এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন রুশনারা।
গত বছর লেবার পার্টি সরকার গঠনের পর গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হন রুশনারা আলী। যুক্তরাজ্য সরকারের এই পদটিকে ‘হোমলেসনেস মিনিস্টার’ বা গৃহহীনবিষয়ক মিনিস্টার বলা হয়। এটাই ছিল তাঁর যুক্তরাজ্য সরকারে প্রথম কোনো দায়িত্ব লাভ। রুশনারার সঙ্গে আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী গত বছর যুক্তরাজ্য সরকারে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘সিটি মিনিস্টার’ করা হয়েছিল তাঁকে। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি তিনিও পদত্যাগ করেন।
রুশনারার জন্ম সিলেটে। রুশনারার বয়স যখন সাত বছর, তখন যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায় তাঁর পরিবার। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন।
রুশনারার পদত্যাগ যে কারণে
পূর্ব লন্ডনের বো এলাকায় অবস্থিত রুশনারা আলীর ওই বাড়িতে মাসিক ৩ হাজার ৩০০ পাউন্ড ভাড়ায় চারজন ভাড়াটে থাকতেন। তাঁদের নির্ধারিত মেয়াদি চুক্তি শেষ হওয়ার পর গত নভেম্বর মাসে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়। পরে বাড়িটি পুনরায় ভাড়ার জন্য ৪ হাজার পাউন্ড মাসিক ভাড়ায় পুনরায় তালিকাভুক্ত করা হয়। এ নিয়ে গৃহহীনদের দেখভালের দায়িত্ব থাকা ‘মিনিস্টার’ রুশনারা আলীর ব্যাপক সমালোচনা হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী লিখেছেন, ‘সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাজের পথে আমার অবস্থান যেন বিভ্রান্তির কারণ না হয়, সে জন্য আমি এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’
এমপি হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটসে এই সম্পত্তির মালিক রুশনারা আলী সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি মালিকদের মাধ্যমে ভাড়াটে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকার জনগণকে অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা দেবে।’
তবে এক ভাড়াটে লরা জ্যাকসন স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এটা একটা রসিকতা। এত ভাড়া আদায় করার চেষ্টা একপ্রকার চরম শোষণ।’
রুশনারা আলীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভাড়াটেরা চুক্তির পুরো মেয়াদ বসবাস করেছেন এবং চাইলে আরও থাকার সুযোগ ছিল। তবে তাঁরা নিজ ইচ্ছায় চলে যান।
অন্যদিকে রেন্টার্স রিফর্ম কোয়ালিশন এবং ভাড়াটে অধিকার সংগঠন অ্যাকর্ন রুশনারা আলীর পদত্যাগ দাবি করে। অ্যাকর্নের কর্মকর্তা অ্যানি কুলাম বলেন, ‘তাঁর কর্মকাণ্ড রেন্টার্স রাইটস (ভাড়াটে অধিকার) বিলের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।’
রুশনারা আলী নিজেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘রেন্টার্স রাইটস বিলের’ পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়, কোনো বাড়িওয়ালা ভাড়াটেকে বের করে ছয় মাসের মধ্যে সেই বাড়ি বেশি দামে ভাড়া দিতে পারবেন না।
রুশনারার সমালোচনা করে কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হাউজিং (ছায়া আবাসন) সেক্রেটারি জেমস ক্লেভারলি বলেন, ‘এটি চরম ভণ্ডামির উদাহরণ। এমন একজনকে গৃহহীনবিষয়ক দায়িত্বে রাখা উচিত নয়।’
গ্রিন পার্টিও সমালোচনায় যোগ দিয়ে বলে, এ ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, ভাড়াটেদের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োজন, যেখানে থাকবে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং কোনো দোষ না করলে ভাড়াটে উচ্ছেদ নিষিদ্ধ করার বিধান থাকবে।
খুলনা গেজেট/এইচ