দুই দফায় ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্তে ভারতের বেশ কিছু খাত বেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখেই পড়বে।
এর মধ্যে চামড়া, রাসায়নিক, জুতা-মোজা, রত্ন ও গয়না, টেক্সটাইল এবং চিংড়িখাত অন্যতম। মূলত বিপুল এই শুল্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্কে ভারতের চামড়া, রাসায়নিক, জুতা-মোজা, রত্ন ও গয়না, টেক্সটাইল এবং চিংড়িসহ বেশ কয়েকটি রপ্তানি খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্পপতিরা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন। এর ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার ‘শাস্তি’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভারতের ক্ষেত্রেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে, অন্য ক্রেতা চীন ও তুরস্ক এ শাস্তির বাইরে রয়েছে।
থিংক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান জিটিআরআই জানায়, এই শুল্কে ভারতীয় পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি দামে পড়বে। ফলে দেশটিতে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
নতুন শুল্ক অনুযায়ী, ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া জৈব রাসায়নিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসবে। একইভাবে কার্পেট ৫২.৯ শতাংশ, নিট পোশাক ৬৩.৯ শতাংশ, বোনা পোশাক ৬০.৩ শতাংশ, তৈরি পোশাক ৫৯ শতাংশ, হীরা ও স্বর্ণপণ্য ৫২.১ শতাংশ, যন্ত্রপাতি ৫১.৩ শতাংশ এবং আসবাবপত্র ৫২.৩ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়বে।
জুলাইয়ের ৩১ তারিখ ঘোষিত প্রথম ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে ৭ আগস্ট ভারতীয় সময় সকাল ৯:৩০টায়। এরপর ২৭ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় ধাপের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (রপ্তানি ৮৬.৫ বিলিয়ন, আমদানি ৪৫.৩ বিলিয়ন)। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে— টেক্সটাইল ও পোশাক (১০.৩ বিলিয়ন), রত্ন ও গয়না (১২ বিলিয়ন), চিংড়ি (২.২৪ বিলিয়ন), চামড়া ও জুতা (১.১৮ বিলিয়ন), রাসায়নিক (২.৩৪ বিলিয়ন) এবং যন্ত্রপাতি (৯ বিলিয়নের কাছাকাছি)।
কলকাতাভিত্তিক চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেগা মোডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগেশ গুপ্ত বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় চিংড়ির দাম অনেক বেড়ে যাবে। ইকুয়েডরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হবে, কারণ সে দেশে মাত্র ১৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় চিংড়ির ওপর রয়েছে ২.৪৯ শতাংশ অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি ও ৫.৭৭ শতাংশ কাউন্টারভেলিং ডিউটি। নতুন শুল্কে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৩.২৬ শতাংশ।
ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের শীর্ষ সংস্থা সিআইটিআই এই পরিস্থিতিকে “গভীর উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল ও পোশাক বাজার এবং এই বাড়তি শুল্ক রপ্তানির প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে তারা জানিয়েছে।
গয়না রপ্তানিকারক কামা জুয়েলারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কলিন শাহ বলেন, প্রায় ৫৫ শতাংশ রপ্তানি এই শুল্কে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীদের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়বেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে অনেক রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়ে গেছে, কারণ ক্রেতারা নতুন শুল্কের কারণে রপ্তানি আদেশ পুনর্বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে এই বাড়তি খরচ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কানপুরের গ্রোমোর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাদবেন্দ্র সিং সচান বলেন, রপ্তানিকারকদের এখন নতুন বাজার খুঁজতে হবে।
তবে ভারতের আশা, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত হলে এই পরিস্থিতি কিছুটা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, উভয় দেশ এখনো একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষিপণ্য, দুগ্ধজাত এবং জেনেটিকালি মডিফায়েড পণ্যে শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে ভারত আপস করবে না। চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ করতে উভয় দেশ আগামী অক্টোবর-নভেম্বর সময়সীমার দিকে নজর রাখছে।
খুলনা গেজেট/এমএম