ডাকসুতে সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও ছাত্রবান্ধব নেতৃত্ব আসুক

আবদুল কাদের খান

জীবনের পড়ন্ত বেলায় কেন যেন পেছন স্মৃতির অবলোকন দারুণ ভালো লাগে। জীবন সায়াহ্নে নস্টালজিয়া মানুষকে একান্তভাবে স্মৃতিকাতর করে তোলে। ৪৯ বছর আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় আজও পর্যন্ত আমার ভাব-ভাবনা চিন্তা চেতনায় জাতীয় জাগরণের বাতিঘর।

তৎকালীন পূর্ব বাংলায় অবিভক্ত ভারতে ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক, দেশপ্রেমে উজ্জ্বল সকল প্রকার গণ-আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। ভাবলে দারুণভাবে বিস্মিত হই, প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্বে ওই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মতো উড়নচণ্ডী এক ভবঘুরে যুবকের পড়ার সুযোগ হয়েছিল।

তৎকালীন ভারতের পলি গঠিত পদ্মা মেঘনা যমুনা বিধৌত গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে গ্রাম প্রধান পূর্ব বাংলার কৃষিজীবী পরিবারের শিক্ষা দীক্ষার স্বপ্নকে সামনে রেখে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সহ বেশ কিছু মনীষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাল প্রবাহে গড়িয়ে গেছে ১০৪ বছর। ১৯২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই সময় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা জাতীয় সংকট যেকোনো কঠিন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক মোকাবেলা করেছে। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার অর্থাৎ জীবনোৎসর্গ করে হলেও দেশমাতৃকার সম্মান অক্ষুণ্ণ তৎকালীন ভারতের পলি গঠিত পদ্মা মেঘনা যমুনা বিধৌত গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে গ্রাম প্রধান পূর্ব বাংলার কৃষিজীবী পরিবারের শিক্ষা দীক্ষার স্বপ্নকে সামনে রেখে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সহ বেশ কিছু মনীষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাল প্রবাহে গড়িয়ে গেছে ১০৪ বছর। ১৯২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই সময় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা জাতীয় সংকট যেকোনো কঠিন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক মোকাবেলা করেছে। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার অর্থাৎ জীবন উৎসর্র্গ করে হলেও দেশমাতৃকার সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ডটি ব্রিটিশ শাসনামলে অন্তর্গত ‘পূর্ব বাংলা’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার পর এই অঞ্চলের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। পুরো ২৩ বছর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের জন্য অধিকার বঞ্চিত তৎকালীন পূর্বক পাকিস্তানের আপামর মানুষ কাঁধে কাঁধ রেখে লড়েছে সামরিক একনায়ক শক্তি ও তাদের তাবেদারদের বিরুদ্ধে। যুব তারুণ্যের বারবার জয় হয়েছে। ১৯৭১ এর মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল অগ্নিগর্ভ হয়। নিজস্ব স্বকীয়তা ন্যায্য হিস্যা দাবি করায় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ বৈষম্যের শিকার নিরীহ বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের বক্তব্য ছিল : : “Kill Bengali people, raped their young ladies and burnt their all properties.”- অর্থাৎ, “বাঙালিদের হত্যা করো, তাদের যুবতীদের ধর্ষণ-বলাৎকার করো এবং তাদের ঘরবাড়িসহ সহায়-সম্পদ পুড়িয়ে দাও।”

এসব কথা বলছি এ কারণে যে, আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অর্থাৎ ডাকসু’র নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন মত ও আদর্শের বেশ কিছু ছাত্র সংগঠন এবং স্বতন্ত্র মানসিকতার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২০২৫ এর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই ডাকসু নির্বাচন আমরা বারবার দেখেছি, রাজনীতিতে একটি ম্যাগনাকার্টা বা দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এজন্য ডাকসু কে বলা হয়, বাংলাদেশের দ্বিতীয় মিনি পার্লামেন্ট। দীর্ঘ ৩০ বছর এই ডাকসু’র কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কি ভেবে যেন ডাকসু নির্বাচন ঘোষণা করে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার বশংধররা ভেবেছিল, তাদের তল্পিবাহক হেলমেট বাহিনী ওই নির্বাচনে জয়লাভ করবে। কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই নির্বাচনে অজো পাড়া গায়ের ছেলে অজ্ঞাতনামা নুরুল হক নুরুকে ভিপি নির্বাচিত করে আপন স্বাতন্ত্র্যে চিরাচরিত ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রাখে।

গত ৫৩ বছর যখন যে দল ক্ষমতার পাদপ্রদীপ স্পর্শ করেছে, তারাই ডাকসু অকেজো করে শিকেয় তুলে রেখেছে। দেশের চলমান বাস্তবতায় শেখ মুজিব কন্যা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে বুঝে যায়, ডাকসু নির্বাচন দিলে, তা হবে তার জন্য মরণ ফাঁদ, গলার কাঁটা।

গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট জুড়ে ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর জনদাবী ছিল-প্রথমে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বস্তরের সংস্কার, হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় বৃদ্ধিতে অতি উৎসাহী কুখ্যাত যে শ্রেণীটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের যথাযথ বিচার করা, পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার পর জাতীয় সংসদের নির্বাচন ঘোষণা করা।

কাকতালীয় হোক আর শুভ চিন্তা বা শুভ বুদ্ধিতে হোক, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের কোটি কোটি মানুষ অর্থাৎ সচেতন অংশের দাবি মেনে নিয়ে ডাকসু বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘোষণা করেছে।

প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে সবার প্রত্যাশা। আশা-আকাক্ষার দোলায় দুলছে সারাদেশ। সবার একটাই প্রশ্ন-ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে তো? আগামী দিনে যারা দেশ জাতি গড়বে, দেশকে সঠিক নেতৃত্ব দেবে, তারা এই ক্রান্তি লগ্নে কোন ধরনের নেতৃত্ব জাতিকে উপহার দেবে, তা দেখার অপেক্ষায়, সমগ্র জাতি সেদিকে তাকিয়ে আছে।

বলা বাহুল্য, সৎ দুর্নীতিমুক্ত ও ছাত্রবান্ধব নেতৃত্ব বিকাশে ডাকসু নির্বাচন কি দিকনির্দেশনা দেয়, দেশের জনগণ তাই দেখার অপেক্ষায়।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন