Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ৭ই আগস্ট, ২০২৫ । ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

বাংলাদেশের জন্য কেমন শাসক দরকার?

এ এম কামরুল ইসলাম

১৯৯৪ সালে আমি কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি ছিলাম। ওখানে এন এস রোডে ‘বইমেলা’ নামে একটি বড় বইয়ের দোকান ছিল। তার সামনে সামান্য খোলা জায়গা ছিল। সেই জায়গায় গিয়ে সময় পেলে বসে বই পড়তে আমার ভীষণ ভাল লাগতো। একদিন বিকালে সেখানে বই পড়তে গিয়ে দেখলাম একজন ভদ্রলোক দোকানে গিয়ে একটা বই নাড়াচাড়া করে রেখে চলে গেলেন।

তিনি যাবার পর আমি দোকানদারের কাছে ঐ ভদ্রলোকের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বললেন- এই ভদ্রলোক কুষ্টিয়া কোর্টের জজ সাহেব। তিনি প্রায়ই দোকানে আসেন এবং অনেক বই নাড়াচাড়া করেন। কিন্তু খুব কম বই কিনেন।

ঐদিন যে বইটি নাড়াচাড়া করেছিলেন সেটা দেখতে চাইলে দোকানদার আমাকে মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী ঢাকা ‘ বইটি বের করে দিলেন। আমি ১২০০ টাকা দিয়ে দুটো বই কিনে জজ সাহেবের বাসা খুঁজে বের করে তাঁর বাসায় গেলাম। পরিচয়ের পর জানলাম তিনি সাব জজ সাহেব।

তাঁর বাসার ড্রয়িং রুমে কোন সোফা বা আসবাবপত্র চোখে পড়লো না। তবে বই ভর্তি দুটো গ্লাসবিহীন র‍্যাক দেখে আমার ভক্তি বেড়ে গেল। আমি তাঁকে স্বসম্মানে একটি বই উপহার দিলে তিনি সানন্দে গ্রহণ করে বললেন-
এই বইটি আমার অনেক দিন ধরে কেনার ইচ্ছে, কিন্তু পকেটে পয়সা না থাকায় কিনতে পারিনি।

কুষ্টিয়া থেকে আমার আকস্মিক বদলীর পর দীর্ঘদিন তাঁর সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তিনি আমাকে মনে মনে খুঁজতেন, আমিও তাকে খুঁজতাম। তিনি  ঢাকা কোর্টের স্পেশাল জজ থাকা অবস্থায় আমার এক ব্যাচমেট তাঁর কোর্টে সাক্ষ্য দিতে গেলে তিনি জানতে চান- কামরুল ইসলাম নামে কোন ওসিকে চেনেন কি না। আমার বন্ধু কয়েকদিন পর ঘটনাটি আমাকে জানালে পরবর্তীতে আমি তাঁর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি হলেও আজ পর্যন্ত আমার সাথে সেই মধুর সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন। আমি তাঁর কাছে অনেক কারণে ঋণী।

কথাটা কেন উঠলো তা বলি।
ওসি হিসেবে আমার চালচলন দেখে তিনি আমাকে একটা গল্প বলেছিলেন যা এখানে তুলে ধরলাম।

একদিন এক দারোগা সাহেব মফস্বলে গিয়ে ভীষণ গরমে মারাত্মক তৃষ্ণার্ত হয়ে এক বাড়িতে ঢুকে ভদ্র ভাষায় একজন মহিলাকে বললেন- মা, আমাকে এক গ্লাস পানি দেবেন।
মহিলা রাগান্বিত হয়ে বললো
– না, আমার সময় নেই।
– আমি ভীষণ তৃষ্ণার্ত। দয়া করে দেন। আমি একজন দারোগা।
– কোন থানার দারোগা আপনি?
– আপনাদের থানার।
– আপনার চাকরি আছে না, চলে গেছে।
– চাকরি আছে।
– পানি চাওয়ার টোন শুনে তো মনে হচ্ছে না চাকরি আছে।

তৃষ্ণার মধ্যেও দারোগা সাহেব মহিলার মতিগতি বুঝে দারোগার মতো করে বললেন-
এই মা…’ তুই পানি দিবি, নাকি তোর বাড়িতে আগুন জ্বালাবো।

মহিলা বললো- এইবার বুঝলাম আপনি দারোগা স্যার। এই চেয়ার দিলাম। বসেন স্যার। গাছ থেকে ডাব পেড়ে আনি।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ভাল কথাকে দূর্বলতা মনে করে। তাই কথায় কথায় বিভিন্ন দলের পরিচয়ে, কখনো ছাত্র পরিচয়ে, আবার কখনো অফিসার পরিচয়ে শাসকের ভদ্রতাকে মূল্যায়ন করে না। যার দায়ভার বহন করে দেশ ও সাধারণ মানুষ।

শাসক যদি সত্যিকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিচল থেকে ও নিজেরা শতভাগ স্বচ্ছ থেকে দারোগা মূর্তি ধারণ করে তাহলে একদিন সবাই ঐ মহিলার মতো সোজা হয়ে চেয়ার পেতে গাছ থেকে ডাব পেড়ে খাওয়াবে। নইলে যে শাসক আসুক না কেন, তাকে পাত্তা না দিয়ে মন যা চায় তাই করবে। দেশটা দিন দিন আরো উচ্ছনে চলে যাবে। সাধারণ মানুষ হবে চরম নিগৃহীত।

আন্দুলিয়া
৩০ জুলাই, ২০২৫।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন