আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশসহ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখ-ের নাম জানান দেওয়ার দিন। ১৯৭১ সালের এদিনে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচির পাশাপাশি খুলনা জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বিজয় মঞ্চে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, দোয়া অনুষ্ঠান। এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সরকারি হাসপাতাল ও কারাগারে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসন : সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানে সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বয়রাস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হবে। সকাল সাড়ে আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন, একই স্থানে তিনদিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা, বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য সকাল নয়টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হবে। সজ্জিত করা হবে রেল, স্টিমার, লঞ্চ ও জাহাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকিটে সিনেমা হলসমূহে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হবে। শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদযোহর বা সুবিধাজনক সময়ে সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে-কেয়ার, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, শিশু পরিবার, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হবে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গিলাতলা শিশুপার্ক, খুলনা রিভারভিউ পার্ক, বয়রা শিশুপার্ক, লিনিয়ার শিশুপার্ক, উল্লাস বিনোদন পার্ক ও খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্কসহ সকল পার্ক বিনাটিকেটে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিনা টিকিটে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর ও ফুলতলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। বিকেল সাড়ে তিনটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে কেসিসি বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধাজনক সময়ে পূর্ব রূপসাঘাটে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের মাজার প্রাঙ্গণে তাঁর বীরত্ব ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল সাড়ে চারটায় শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া, কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী : বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উদ্যোগে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে ফ্লাই পাস্ট প্রদর্শনী হবে। এ উপলক্ষ্যে বিমান বাহিনীর তিনটি বিমান আকাশে দৃষ্টিনন্দন কসরত প্রদর্শন করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়কে স্মরণীয় করে তুলতে এ বিশেষ ফ্লাইপাস্ট প্রদর্শনী উপভোগ করার জন্য খুলনাবাসীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন খুলনা জেলা প্রশাসন।
কেসিসি : সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নগর ভবন, কেসিসি’র সকল স্থাপনাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন; কেসিসি’র গুরুত্বপূর্ণ ভবনসহ নগরীর প্রবেশদ্বার, গুরুত্বপূর্ণ আইল্যান্ড ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিতকরণ এবং নগর ভবন, প্রশাসক ভবন, খালিশপুর শাখা অফিস, বীর বাঙালি ভাস্কর্য ও শহীদ হাদিস পার্ক আলোকসজ্জিতকরণ; শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য খালিশপুরস্থ ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক ও গল্লামারীস্থ লিনিয়ার পার্কে বিনামূল্যে প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সকাল ৯টায় নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান এবং বিকেল ৪টায় জেলা স্টেডিয়ামে খুলনা সিটি কর্পোরেশন একাদশ বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। কেসিসি’র প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার আহমেদ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করবেন।
বিএনপি : খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় গল্লামারী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা আড়াইটায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় র্যালি বের হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, রাস্তা, বিভিন্ন ভবন, হলসমূহ ও অন্যান্য স্থাপনা দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
কুয়েট : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় অডিটোরিয়ামে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সন্তানদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ। সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসস্থ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য “দুর্বার বাংলা” এর পাদদেশে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা। বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ (শিক্ষক বনাম ছাত্র) এবং বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা প্রেসক্লাব : সকালে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা ক্লাবের হুমায়ূন কবীর বালু মিলনায়তনে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এমইউজে : দিবসটি উপলক্ষ্যে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, খুলনা (এমইউজে) বেলা ১১টায় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে ইউনিয়ন কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভাগীয় কমিশনার, কেএমপি, জেলা পুলিশ সুপার, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন।

