রবিবার । ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ । ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ঢাকায় জাতীয় সম্মেলন থেকে ৭ দাবি তুললেন ইমাম-খতিবরা

গেজেট প্রতিবেদন

ঢাকায় প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম–খতিবদের নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সম্মিলিত ইমাম–খতিব জাতীয় সম্মেলন ২০২৫’। ইমাম–খতিবদের দ্বীনি দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং সামগ্রিকভাবে খতিব সমাজের ৭ দফা দাবি তুলে ধরার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ২টায় রাজধানীর আগারগাঁও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন শুরু হয়।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাকী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মুফতি আজহারুল ইসলাম ও মুফতি শরিফুল্লাহ।

সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া বক্তব্য দেন- জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

সম্মেলনে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাফেজ মাওলানা আব্দুর হক, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন ও মাওলানা আব্দুল হাই নদভীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বহু আলেম।

সম্মানিত ইমাম-খতিবদের মধ্যে আরও ছিলেন ড. খলিলুর রহমান মাদানী, মুফতি আবু সাঈদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান মমতাজি, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আব্দুল হাই মিশকাত ও মুফতি বশিরউল্লাহ।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা সারোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আব্দুল কাদের, মাওলানা আবদুর রহিম ইসলামাবাদী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবাহানী, মুফতি আব্দুল কাইয়ুম কাসেমী ও মুফতি রেজাউল করিম আবরারসহ অন্যান্য শীর্ষ আলেম–ওলামা।

সম্মিলিত ইমাম–খতিব জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী ও সদস্যসচিব মুফতি আজহারুল ইসলামের সঙ্গে বাস্তবায়ন কমিটিতে কাজ করেন মুফতি আবদুর মালেক, মুফতি দেলোয়ার হোসাইন, মুফতি মুনীরুজ্জামান খান, ড. জয়নুল হক খান, মাওলানা জিয়াউল করিম মাহমুদ, মুফতি নেছার হুমায়ূন মাহনির, মুফতি শাব্বির আহমাদ মঞ্জিলী ও মুফতি শফিকুল ইসলাম।

সম্মেলনে উপস্থাপিত ইমাম-খতিবদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো-

১. রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধর্মের অধিকার সংরক্ষণ করে ইসলামী শরিয়াহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

২. রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে ইমাম–খতিবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি, গ্রাম আদালত, দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটি এবং ইউনিয়নভিত্তিক সেবা কার্যক্রমে ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

৩. সব মাদ্রাসার বিদ্যুৎ বিল মসজিদের ন্যায় ডি–ট্যারিফের আওতায় আনতে হবে এবং সব মসজিদ ও মাদ্রাসার পানি বিল ৫০ শতাংশ মওকুফ করতে হবে।

৪. দেশের সব মসজিদের ইমাম–খতিব, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জন্য পৃথক চাকরি বিধি প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রতিটি মসজিদ কমিটিতে ইমাম–খতিবকে পদাধিকারবলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের বিধান করতে হবে।

৫. উপযুক্ত প্রমাণ ও সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া কোনো ইমাম–খতিব বা আলেমকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না।

৬. দাওরায়ে হাদিসসহ সরকার স্বীকৃত সনদপ্রাপ্ত আলেমদের সরকারি মসজিদের ইমাম–খতিব, স্কুল–কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক এবং কাজি হিসেবে নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৭. ওয়াকফ সম্পত্তির আয়ের অপচয় রোধে প্রচলিত ওয়াকফ প্রশাসন আইনকে বিশেষজ্ঞ মুফতি ও ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্ত করে শরিয়াহর আলোকে যুগোপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটি এবং শিক্ষা কমিশনে বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ও ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে।

আয়োজক ও নেতারা আশা প্রকাশ করেন, এই জাতীয় সম্মেলন ও ৭ দফা দাবিনামার মাধ্যমে দেশের ইমাম–খতিব সমাজের ন্যায্য দাবি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নতুন গতি পাবে এবং রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগিরই এসব দাবির বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন