ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের পর ভারত তার পূর্বের অবস্থানে আর নেই। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বেশ কয়েক বছর ধরে গলা ফাটিয়ে বলতে থাকে, তাদের দেশ বাংলাদেশের কোনো দল বা ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নেয় না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী তাকে ভারত আশ্রয় দিয়ে পূর্বের বক্তব্য থেকে সরে গেছে। ইতোমধ্যেই বিবিসি সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। রায়ের পর তিনি বলেছেন, “তিনি নির্দোষ।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের সময় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে গণঅধিকারের ভিপি নূর এ ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বেশ কয়েকটি চুক্তির কারণে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তর ভাষ্য দেয়, তারা বাংলাদেশের কোনো দল বা ব্যক্তির পক্ষে নয়, তারা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে। গেল ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা সহ তিন জনের বিচারের পর ভারত তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে যায়। সে দেশের গণমাধ্যম ও বিজিপি বন্দিবিনিময় চুক্তি লঙ্ঘন কর বক্তব্য দিচ্ছে। যা কূটনীতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত তাকে প্রত্যর্পণ না করায় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক তিন বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান, শ্রীরাধা দত্ত ও সঞ্জয় ভারতের সামনে থাকা বাস্তবতা, দ্বন্দ্ব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরেছেন।
কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাসিনাকে ফেরত দিতে না চাইলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে মধ্যে কী ধরনের টানাপড়েন তৈরি হতে পারে তা ফুটে উঠেছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, নির্বাসিত অবস্থায় হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে দীর্ঘ মেয়াদে চাপ বজায় থাকবে। তার ভাষায়, হাসিনার উপস্থিতি দু’ দেশের সম্পর্কে কাঁটার মতো আটকে থাকবে।
তবে তিনি এটিও মনে করেন যে ভারত নিজের মিত্রদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার যে প্রতিশ্রুতি দেয়, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া তারই প্রতিফলন। রাজনৈতিকভাবে, ভারতের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে নতুন কিছু সুযোগও তৈরি করতে পারে বলে কুগেলম্যানের ধারণা।
তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বংশভিত্তিক দলগুলো দীর্ঘসময় সংকটে থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায় না।
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারত ‘এক অস্বস্তিকর অবস্থায়’ পড়েছে।”
তার মতে, ভারত বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশ হাসিনার প্রতি ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাকে আবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়া সম্ভব না।
দত্ত বলেন, “আদর্শ অবস্থায় ভারত চাইবে একসময় আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক, কারণ হাসিনা ভারতের জন্য সবসময়ই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিকল্প।”
খুলনা গেজেট/এনএম

