রবিবার । ১৬ই নভেম্বর, ২০২৫ । ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকারীরা পরস্পরের প্রতি গুলি ছুড়ে আত্মহত্যা করে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৮১ সালের ৩০ মে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তখন রাত আনুমানিক আড়াইটা। মূষলধারায় বৃষ্টি আর বজ্রপাত। হঠাৎই চারদিক কাঁপিয়ে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ প্রেসিডেন্টের কক্ষ লক্ষ্য করে। লে. কর্নেল ফজলে হাসানের নিক্ষিপ্ত দুটো রকেট শেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সার্কিট হাউজের দোতলায় তার শয়নকক্ষের নীচের কার্নিশের একটা অংশ গুঁড়িয়ে দেয়। বিদ্রোহের দুই নেতা কর্ণেল মতিউর রহমান ও কর্ণেল মাহাবুবের নেতৃত্বে একটি দল প্রেসিডেন্টকে গুলি করে হত্যা করে। পরপরই তারা পরস্পরের প্রতি গুলি ছুড়ে আত্মহত্যা করেন।

সাংবাদিক ও গবেষক ইসহাক কাজল তার বাংলাদেশের তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ বিদেশি আগ্রাসন শিরোনামের গ্রন্থে এ তথ্য প্রকাশ করেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণউষার গ্রামের সন্তান, লন্ডন প্রবাসী। তিনি বাম দর্শনের মানুষ। একসময় ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ছিলেন।

গ্রন্থে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হত্যার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কারা জড়িত, দেশবাসী তা জানতে পারেনি। এ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মে. জে. আবুল মুঞ্জুরকে চিহ্নিত করা হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর খুলনা বিজয়ের অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি ছিলেন। তাকেও হত্যা করা হয়।

এ গ্রন্থের একাংশে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যায় জে. এইচ এম এরশাদ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন। ১৯৮২-৯০ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। উল্লিখিত সময়ের প্রথম দিকে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। ফাঁসিতে মৃত ব্রিগেডিয়ার মহসিন ও কর্ণেল মাহফুজ দু’জনই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রেসিডেন্ট হত্যার জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান জে. এইচ এম এরশাদকে দায়ী করেন।

বিএনপি মিডিয়া সেল আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল রচিত ‘চির ভাস্বর জনতার জিয়া’ শিরোনামের প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, প্রায় অরক্ষিত সার্কিট হাউজের দোতলায় বিনা বাধায় উঠে আসা প্রথম দলে ক্যাপ্টেন মোসলেহউদ্দীনের বলা- ‘আমাদের সাথে যেতে হবে স্যার’। কথাগুলো পুরোপুরি শেষ হবার আগেই দ্বিতীয় দলের সামনে থাকা লে. ক. মতিউর প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে সাব মেশিনগানের ম্যাগাজিনের সব কটা গুলি ছোড়ে। প্রেসিডেন্টের মাথা আর বুকে ২৭ টা বুলেটের নির্মম প্রাণঘাতী আঘাত। এমন আকস্মিক আক্রমণে হতভম্ব লে. ক. মতির সাথে আসা অন্য সেনারা, কিংকর্তব্যবিমূড় সেনা দল এক রাশ অবিশ্বাস নিয়ে অধিক দ্রুততায় নেমে গেল নিচে, ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার কথা তো ছিল না! সিঁড়ির গোড়ায় পড়ে রইল প্রেসিডেন্টের নিথর দেহ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন