চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক নারী সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ঝুমা আক্তার (২৩) নামে ওই নারী এমন সময় সন্তান জন্ম দেন, যখন তাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে ঘণ্টায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। হঠাৎ তার প্রসব বেদনা উঠে। শেষ পর্যন্ত আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাতে জন্ম নেয় একটি সন্তান। জন্ম নেওয়া মেয়েশিশুটি সুস্থ আছে। শিশুটির মাকে এখনও অক্সিজেন দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফাহিম আলী রেজা বলেন, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তখন তাকে ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। এ অবস্থায় সন্তান জন্ম দেওয়াটা একটি কঠিন কাজ ছিল। আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। যদি অস্ত্রোপচার করতে হতো, তাহলে ঝুঁকিতে পড়তে হতো। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়েছে। জন্ম নেওয়া নবজাতকটি ভালো আছে।
তিনি বলেন, ঝুমা আক্তারকে এখনও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ লিটার অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ওনার অবস্থা স্থিতিশীল। আশা করছি, আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যাবেন। নাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা লাগিয়েও ঝুমা আক্তার ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছেন। তিনি অনেক সাহসী।
ডা. ফাহিম আলী রেজা আরও বলেন, জন্ম নেওয়া মেয়েশিশুটি এখন ভালো আছে। নবজাতকের ওজন প্রায় আড়াই কেজি। শিশুটি করোনা আক্রান্ত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গর্ভে থেকে করোনা নিয়ে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। শিশুটিকে আরও একদিন দেখার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিশুটি বর্তমানে তার অভিভাবকদের কাছেই আছে।
এদিকে করোনা আক্রান্ত মায়ের শিশুর জন্ম দেওয়াতে খুশি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালে মা ঝুমা আক্তার ও শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভি চিহ্ন দেখিয়ে ছবিও তোলেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার মানসী ভিলায় থাকেন আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী ঝুমা আক্তার (২৩)। আবদুল মোতালেবের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অন্তঃসত্ত্বা ঝুমা আক্তারের জ্বর ও কাশিসহ করোনার লক্ষণ দেখা দেয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরসরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তাকে না রেখে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম নগরীতে। এরপর ২৮ জুন তাকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে। পরে পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় নেওয়া হয় হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডে। সেখানে তাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ লিটার অক্সিজেন দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়।
পরে মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক ফাহিম রেজা, ডা. আফরা, ডা. মাকসুদা হক মিতা, ডা. রিহুল, ডা. ইমরান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ রূপনা বড়ুয়া, সিনিয়র নার্স রোকেয়া, মিডওয়াইফ সেতু, আইরিন, সালমাসহ সংশ্লিষ্টরা আইসিইউতে বিশেষ ব্যবস্থায় ঝুমা আক্তারের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর চেষ্টা শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন ঝুমা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মা ও শিশু হাসপাতালে দুই মাস আগেও করোনা পজিটিভ এক নারীর সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ভূমিষ্ট করানো হয়েছিল। তবে ওই রোগীর অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না।
খুলনা গেজেট/এনএম