খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

শতবর্ষ পেরুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গেজেট ডেস্ক

বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ পূর্ণ করেছে একশ বছর। একশ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই পূর্ব বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। একশ বছর পূর্ণ করার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করবে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। শত বছর পূর্ণ করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উন্মেষলগ্নে এবং জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশের এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার পাশাপাশি মানববিদ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে আগামীর শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও সৃজনমুখী অবদান রাখবে। জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতাকে অবলম্বন করে প্রণীত ভৌত ও একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বশিক্ষা মানচিত্রে ভিন্ন উচ্চতায় উপনীত হবে বলে নিজেদের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাঁরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি’ করতে কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প এবং মৌলিক গ্রন্থ রচনাসহ জার্নালসমূহ আধুনিকায়ণ ও শতবর্ষের ওপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, অধ্যাপক ড. রতন লাল চক্রবর্ত্তীর সম্পাদনায় ‘হিস্ট্রি অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ এবং এমিরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘দ্য রোল অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইন মেকিং অ্যান্ড সেপিং বাংলাদেশ’ নামক দুটি গ্রন্থ প্রণয়ন এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সংযোজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার আধুনিকায়ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই জাতির যা কিছু মহৎ, যা কিছু উত্তম তার সবকিছুর পেছনের যে ভূমিকা তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনে, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক মূলবোধের বিকাশে সর্বোপরি একটি জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক গণতান্ত্রিক এই সব মূল্যবোধের লালনকেন্দ্রের উৎপত্তিস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এটিকে আবর্তন করেই জাতির সব বৃহত্তর অর্জনসমূহ, সব উন্নয়নের একটি শক্তিশালী নিয়মক ও অনুঘটক ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের সবই ইতিহাস এবং একসূত্রে গাঁথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দেশের, এই ভূখণ্ডের মানুষের উচ্চশিক্ষার পথটিকে সুগম করে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল থাকবে সবসময়। আর একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে এই দেশের মানুষের সচেতন করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম সর্বক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এগুলো ভবিষ্যতে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবেন বা শিক্ষকতায় আসবেন তাদের জন্য সবসময় অনুপ্রেরণার অংশ হয়ে থাকবে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অদম্য এই যাত্রা নিয়ে সংহতি এবং ক্ষোভ দুই আছে অনেকের মনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। আর ভিসিও নেই। যারা আছেন উপযাচক। যার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্যে নেই। মনে রাখতে হবে, যেকোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নেতৃত্বের গুণে। সেদিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন পথহারা। সেজন্যে বঙ্গবন্ধু যেভাবে ভিসি নিয়োগ দিতেন সেটিও যদি বর্তমান সরকার অনুসরণ করত তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অন্যরকম হতো।

গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় বহন করে বলেও মন্তব্য করেন ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে গবেষণা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার স্থানে নেই। গবেষণা খাতে তার বরাদ্দ যৎসামান্য। তাও গবেষণা হয় না। যদিও হয়, তাতেও চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি স্যার পি. জে. হার্টগ প্রথম কনভোকেশনে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষকতা ও গবেষণা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের গবেষণা ডিগ্রি নেই। প্রকাশনা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন স্যার নবাব সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দ চন্দ্র রায় প্রমুখ।

সেই সময় ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিলের জন্য নয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে একমাত্র বাঙালি মুসলামন সদস্য হিসেবে ছিলেন খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ। ১৯১৭ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর নবাব সৈয়দ শামসুল হুদাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ঘোষণা করা হয়।

শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠান হবে না, তবে অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি হবে।

অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল বক্তা থাকবেন ভাষাসৈনিক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ : ফিরে দেখা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করবেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!