‘পাশের বাসার ছেলেটাকে দেখেছ? তোমার চাইতে কতো লক্ষ্মী। মা-কে একটুও জ্বালায় না। পরীক্ষাতেও ভালো রেজাল্ট করে। আর তুমি?’- এমন কথা হর হামেশাই সন্তানকে বলা হয়ে থাকে। বলার পেছনে কারণও আছে। কেউ তো আর নিজের সন্তানের খারাপ চান না। মনে করা হয় লক্ষ্মী বাবুদের সঙ্গে তুলনা করলে তাদের দেখাদেখি সন্তান নিজেকে শুধরে নিবে। যদি এমন করে থাকেন তাহলে নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করছেন আপনি। সন্তানকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন আপনি নিজেই।
কারও সঙ্গে তুলনা করা কোনো সমস্যা কমায় না বরং বাড়ায়। ক্রমাগত তুলনা করার ফলে সন্তানের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। জেনে নিন সন্তানকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করার কিছু বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে।
আত্মবিশ্বাসের অভাব
সন্তানকে সারাক্ষণ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে তুলনা করে ছোট করা হলে তার আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে না। সব সময়েই সে নিজেকে দোষী, নিষ্কর্মা এবং ব্যর্থ ভাববে। এমনকি এই সমস্যা বড় হয়েও থেকে যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ফলে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ক্রমাগত সন্তান পিছিয়ে পড়তে থাকে আশে পাশের সবার চাইতে।
হিংসার বীজ বপন
ভাই বোন কিংবা অন্য সম বয়সীদের সঙ্গে ক্রমাগত তুলনা করলে সন্তানের মনে হিংসা তৈরি হয়। যার সঙ্গে আপনি তুলনা করছেন সেই মানুষটির প্রতি চরম ঘৃণা তৈরি হয় ছোট শিশুটির কোমল মনে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এই রেষারেষি সারাজীবন থেকে যায় সেই সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে।
মানসিক চাপ
আপনি হয়তো সন্তানকে একটু বকে গিয়ে নিশ্চিন্তে টিভি দেখা শুরু করলেন। কিন্তু সন্তানের কোমল মনে কী পরিমাণ চাপ তৈরি হয়েছে তা হয়তো বুঝতেও পারবেন না। সন্তানকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করলে ভীষণ চাপ সৃষ্টি হয় কোমল মনে। যা অনেক সময় ব্যর্থতা এমনকি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়েও দাঁড়ায়।
মেধা চাপা পড়ে
আপনার সন্তান হয়তো ছবি আঁকায় খুব ভালো। কিন্তু আপনি ক্রমাগত তাকে তুলনা করছেন এমন একজনের সঙ্গে যে অংকে ভালো। মনে রাখা জরুরি যে সবার সব বিষয়ে মেধা থাকে না। সব কিছুতেও একশতে একশ পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার সন্তান যেই বিষয়ে পারদর্শী সেটার প্রশংসা করুন। আর যেই বিষয়ে দুর্বল সেই বিষয়টা আরেকটু যত্ন নিয়ে তাকে পড়ান কিংবা বোঝান। নয়তো আপনার সন্তানের মেধা চাপা পড়ে যাবে তুলনার জঞ্জালে।
বাবা-মায়ের সঙ্গে দূরত্ব
অন্যের সঙ্গে তুলনা করে আপনি সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা নষ্ট করছেন নাতো? অন্যের সঙ্গে তুলনায় অতিষ্ঠ হয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তান তার বাবা-মাকে ঘৃণা করা শুরু করে। ফলে তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্ব অনেক সময় চিরস্থায়ী হয়ে যায়। ফলে টিন-এজ এর মানসিক টানাপড়েনগুলো সন্তান তার অভিভাবকের সঙ্গে শেয়ার করতে না পেরে ভুল পথে পা বাড়ায়।
খুলনা গেজেট/এনএম