ঈদুল আযহার দিনে কুরবানি করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্য ও ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। ধনী ব্যক্তির উপর এই দিনগুলোতে কুরবানি করা ওয়াজিব।
আবার সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ পশু কুরবানি করা অর্থাৎ অকীকা করাও একটি সুন্নাত আমল। প্রিয় নবীজি (স.) ইরশাদ করেন- সন্তানের সাথে আকীকার বিধান আছে। সুতরাং তার (বাচ্চার) পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর এবং তার থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (চুল ইত্যাদি) দূর করে দাও। সহীহ বুখারী-৫৪৭১। এছাড়া হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আকীকার ক্ষেত্রে সরাসরি ‘সুন্নাত’ শব্দ বর্ণিত হয়েছে। মুসান্নাফে আবি শাইবা-২৪২৪৭।
ওয়াজিব কুরবানি ও সুন্নাত আকীকা আলাদা আলাদা পশু দিয়ে করতে পারলে তো আলহামদুলিল্লাহ। যদি কেউ একসাথে একই পশুতে করতে চায় সেটাও করতে পারবে।
আমরা জানি কিছু ক্ষেত্রে নফল বা সুন্নাত ইবাদতকে, ওয়াজিব বা নফলের সাথে মিলিয়ে আদায় করা যায়। যেমন, মসজিদে প্রবেশ করে যদি ফজরের সুন্নাতের সাথে বা তাহিয়্যাতুল অজুর সাথে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নিয়ত করে তাহলে উভয়টা আদায় হয়ে যাবে। ‘হাশিয়ায়ে তহতবী আলা মারাকিল ফালাহ’ – ২১৬। অনুরুপ ভাবে কুরবানি ও আকীকা একসাথে করলে তা আদায় হয়ে যাবে।
হযরত হাসান বসরী, ইবনে সিরিন থেকে বর্ণিত আছে “যখন বাচ্চার পক্ষ থেকে কুরবানি দেয়া হবে সেটা তার আকীকার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে”। মুসান্নাফে আবি শাইবা-২৪২৬৭-৮। অর্থাৎ বাচ্চার পক্ষ থেকে কুরবানি দিলে সেটা আকীকা হবে। আমরা জানি একটি গরু জাতীয় পশুতে অনুর্ধ ৭ জনের পক্ষ থেকে কুরবানি করা যায়। সহীহ মুসলিম -১৩১৮। তাহলে যে কুরবানি বাচ্চার পক্ষ থেকে আদায় করলে আকিকা হয়ে যাবে, সে কুরবানিও সাত শরিকে অবশ্যই করা যাবে। সুতরাং যে কোন স্বাভাবিক আকীকাও কুরবানির পশুতে শরিক হলে আদায় হয়ে যাবে।
সর্বোপরি কথা হলো আকীকাও এক প্রকার কুরবানি। কুরআনে আল্লাহ তা’আলা কুরবানিকে ‘নুসুক’ শব্দে উল্লেখ করেছেন। বাকারা ১৯৬। সুরা আনআম ১৬২ তে قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ আপনি বলুন আমার নামায, (নুসুক) কুরবানি, আমার জীবন-মরণ সব আল্লাহর জন্য। আর আকীকাকেও হাদীস শরীফে ‘নুসুক’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে مَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَنْسُكَ عَنْ وَلَدِهِ فَلْيَفْعَلْ، তোমাদের মধ্যে যে তার সন্তানের পক্ষ থেকে (নুসুক) আকীকা করতে চায় সে করতে পারে….। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৭৯৬১। মুসতাদরাকে হাকেম ৭৫৯২, সুনানে আবু দাউদ-২৮৪২, নাসায়ী-৪২১২।
এক পশুতে অনুর্ধ ৭ জনের পক্ষ থেকে কুরবানি আদায় করার অনুমতি আছে। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন- হুদাইবিয়ার সদ্ধির বছরে আমরা রসুল (স.) এর সাথে ১ উষ্ট্রী ৭ জনের এবং ১গরু ৭ জনের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছিলাম। সহীহ মুসলিম ১৩১৮।
যেহেতু আকীকাও এক প্রকার কুরবানি’ তাই আকীকাও অনুর্ধ ৭ শরিকের যে কোন এক বা একাধিক শরিক হলে তা যৌক্তিকভাবে অবশ্যই আদায় হয়ে যাবে।
তাছাড়া ওয়াজিব হোক বা সুন্নাত, উদ্দেশ্য হল আল্লাহর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি। যেহেতু উভটির উদ্দেশ্য এক, আবার অনেক বিধানের ক্ষেত্রে কুরবানির ও আকিকা একই রকম, তাই উভয়টি আদায়ও একসাথে করা যাবে। এ ব্যপারে কোন নিষেধাজ্ঞা তো পাওয়া যায় না বরং অসংখ্য ফতোয়ার কিতাবে ফুকাহাদের গবেষণায় কুরবানির সাথে আকীকার অনুমতি পাওয়া যায়। যেমন, ওয়াজিব কুরবানির সাথে নফল কুরবানি দেওয়া যায়, হজের দম বা তামাত্তু হজ্জের কুরবানি সব এক পশুতে করা যায়। ফতোয়ায়ে শামি ৬/৩২৬, বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭২, ফতোয়ায়ে দেওবন্দ, ফতোয়া নং-১৫৯২৩৭।
তবে কারো মনে যদি প্রশান্তি না আসে, সে আলাদা কুরবানি করতে চায় তবে তো আরো উত্তম।
লেখকঃ মুহাদ্দিস, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা।
খুলনা গেজেট/ টি আই