সাক্ষাতে কথা শুরুর আগে সালাম দেওয়া। প্রসঙ্গত এ বিষয়টিও সুরা সুরা নিসা-৮৬ নং আয়াতে “ফাকুল সালামুন আলাইকুম” আয়াতাংশে সুক্ষ্মভাবে উল্লেখ হয়েছে। ব্যাকরণগত সুক্ষ্মতার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সুনিপুন ভঙ্গিতে কুরআন বিষয়টি উপস্থাপন করেছে।
আলোচ্য আয়াতাংশে “ফাকুল সালামুন আলাইকুম” বাক্যে মহান আল্লাহ স্বীয় হাবীবকে বলছেন, আপনি ততক্ষনাৎ বলুন, আস্সালামু আলাইকুম। অর্থাৎ যখন মুমিন ব্যক্তিগন আপনার সাক্ষাতে আসে ততক্ষনাৎ (কথা শুরুর আগেই) বলুন “আস্সালামু আলাইকুম। এখানে “ততক্ষনাৎ” এর অর্থদানকারী কেবল মাত্র একটি অক্ষর। আরবী ব্যাকরণ মতে “ফা” অক্ষরটি দুই তথাধিক বিষয়ের মাঝে বিরতিহীন ও ধারাবহিকতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং সাক্ষাতে সালাম দিয়ে কথা শুরু করা সালামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এতে উভয়ের মধ্যকার স্বভাবজাত ইতস্ততাবোধ দূর হয়। যা তাদের পরবর্তী আলাপচারিতার জন্য বড় সহায়ক। অথবা এমন কারো সাথে সাক্ষাত হতে যাচ্ছে যে তার ব্যাপারে আগে থেকেই বিকৃত চিন্তা লালন করে বা আপসে মনমালিন্যে লিপ্ত দুই ব্যক্তির সাক্ষাত। এক্ষেত্রেও কথা শুরুর আগে সালাম দেওয়া মুহুর্তেই পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে।
এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আরো একটি মজার প্রেক্ষাপট রয়েছে। জান্নাতে প্রবেশের সময় জান্নাতীদের উদ্দেশে দারোয়ান সর্বপ্রথম সালাম দিবেন অতপর কথা শুরু করবেন। অপর দিকে জাহান্নামের দারোয়ান জাহান্নামীদের উদ্দেশে কোন সালাম দিবে না। সরাসরি কর্কশ ভাষায় তাদের সম্বোধন করবে। সুতরাং বলাই যায় কথাবার্তার আগে সালাম দেওয়া জান্নাতের ভূষণ। জান্নাতের চিত্র।
জান্নাতে প্রবেশের সেই মুহুর্তের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখ এসেছে- খোদাভীরুদের যখন জান্নাতের দিকে দলবদ্ধভবে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জন্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হবে তখন জান্নাতের দারোয়ান তাদের বলবে “সালামুন আলাইকুম”। (অত:পর বলবেন) তোমরা খুব ভাল করেছ। তোমরা স্থায়ীভাবে জান্নাতে প্রবেশ কর। (সুরা যুমার-৭৩)
অপর দিকে, কাফেরদের যখন জাহান্নামের দিকে দলবদ্ধভবে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হবে তখন জাহান্নামের দাররক্ষী তাদের বলবে, তোমাদের কাছে কি কোন বার্তাবাহক আসেনি? যে তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে অবগত করবে। আর তোমাদেরকে এই দিনের সাক্ষাতের ভয় দেখাবে। তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলো। (সুরা যুমার-৭১)
অতএব কথা শুরুর আগে সালামের বিষয়টি সর্বক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। কেবলমাত্র সাক্ষাত পর্বে নয় বরং বক্তব্য ও বক্তৃতার ক্ষেত্রেও। ফোনে কথা বলার সময় বা মেসেঞ্জারে আলাপচারিতার পূর্বে হাই, হ্যালোর পরিবর্তে সালামের ব্যবহার আরো বেশি সুন্দর। ঘরে প্রবেশের সময়, অফিসের ডেস্কে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় সালাম হতে পারে আমাদের প্রথম কথা।
(লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া, ফুলবাড়িগেট, খুলনা)