খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যু ৫ লাখ ছাড়ালো, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে হাজার হাজার মানুষ যখন রাস্তায় নেমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারোর পদত্যাগ দাবি করছেন, ওই একইদিনে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ব্রাজিলে করোনায় প্রাণহানি ৫ লাখ ছাড়িয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে করোনায় প্রাণহানির আরেকটি দুঃখজনক মাইলফলক ছুঁলো ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যু ছাড়াল ৫ লাখ। অথচ করোনাকে ‘সাধারণ ফ্লু’ বলে তাচ্ছিল্য করে তা মোকাবিলায় গুরুত্ব দিতে চাননি দেশটির প্রেসিডেন্ট।

ব্রাজিলে এখনো প্রতিদিনই ৭০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান এখন পর্যন্ত টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন। আর এক ডোজ নেওয়া মানুষের সংখ্যা ২৯ শতাংশ।

করোনা মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার না দেওয়া, বিধিনিষেধ দিয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে অনীহা, সুযোগ থাকলেও আগাম চুক্তি করে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত না করা ও মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

ব্রাসিলিয়ায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৬ বছরের অ্যালিন রাবেলো বলছেন, ‘আমরা ঘাতক বোলসোনারো সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ করছে কারণ তারা সুযোগ পেয়েও টিকা কেনেনি এবং দেশের মানুষের জন্য গত বছর কিছুই করেনি।’

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ ইস্টার সাবিনো বলছেন, ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেহেতু দেশে সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাই মহামারি মোকাবিলার জন্য একমাত্র উপায় এখন মানুষকে টিকা দেওয়া।

ব্রাজিলের গণমাধ্যমগুলো বলছে, স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির ২০টি অঙ্গরাজ্যের অন্তত ৪৪টি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে এ সময় ছিল প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর পদত্যাগ দাবিতে নানা প্ল্যাকার্ড। ঢোল বাজিয়ে চিৎকার করে তার স্লোগান দিচ্ছেন।

গত মে মাস থেকে দেশটিতে সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভ শুরু হয়। সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ হয়েছিল গত ২৯ মে। ওইদিন রাজধানী রিও ডি জেনিরো ও অন্যতম বৃহৎ শহর ব্রাসিলিয়াসহ দেশটির তিন শতাধিক মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখান।

এর মধ্যে করোনাবিধি উপেক্ষা করে মোটরসাইকেল মিছিল করায় গত ১৩ জুন প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো, তার ছেলে এদোয়ার্দো বোলসানারো এবং ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টারকিসিও গোমেসকে জরিমানা করেছিল দেশটির সাও পাওলো প্রদেশের সরকার।

কট্টর ডানপন্থি বোলসোনারো দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপের বিরোধী। তার মতে, এ ধরনের বিধিনিষেধে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তো নয়ই, উল্টো দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেখানে করোনা টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পরও মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে, সেখানে এই পরামর্শের ঘোরবিরোধী অবস্থান বোলসোনারোর। এ জন্য তাকে একবার জরিমানাও গুণতে হয়েছিল।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বোলসোনারো বলেন, ‘যারা বলে টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে, তারা বিজ্ঞানে বিশ্বাস করে না। করোনা টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছেন— এমন ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানো একেবারেই অসম্ভব।’

বিরোধী দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও সামাজিক আন্দোলকারীদের অভিযোগ বোলসোনারোর উদাসীনতার কারণে ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, করোনার কারণে যথাযথ পদক্ষেপ নেননি বোলসোনারো। আর এর পরিণতিকেও উপেক্ষা করেছেন তিনি। এ কারণেই এত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে ও ভেঙে পড়েছে গোটা দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। এর দায় পুরোটাই তার।

এদিকে সরকারের মহামারি মোকাবিলা ও দেশের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে ব্যর্থতার অভিযোগে ব্রাজিলের সিনেট তদন্ত শুরু করায় চাপের মুখে পড়েছেন বোলসোনারো। দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ তার ওপর এই চাপ আরও বাড়াবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!