সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবি’র নজরদারি বৃদ্ধি করলেও থামছে না অবৈধ অনুপ্রবেশ। প্রায় প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে মানুষ। এদের মধ্যে অধিকাংশ সংখ্যাক মানুষ সীমান্তে বিজিবি’র হাতে আটক হলেও অনেকে দালালের সহযোগিতায় সীমান্তরক্ষীদের নজর এড়িয়ে গোপনে চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ফলে অবৈধভাবে ভারত থেকে আগতদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমের শংকা থেকেই যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমন প্রতিরোধে সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে অবৈধ গমনাগমন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিজিবি’র পক্ষ থেকে সীমান্তে বিশেষ অভিযান, কঠোর নজরদারী এবং টহল তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৫৭ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ৩ জন মানব পাচারকারী আটক করেছে।
এর মধ্যে গত ১৪ জুন সাতক্ষীরার ভোমরা এবং তলুইগাছা সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে ২ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ১জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি কক্সবাজার, যশোর ও সাতক্ষীরায়। গত ১৩ জুন রোববার কলারোয়ার হিজলদী ও মাদরা এবং সদর উপজেলার তলুইগাছা ও বৈকারী সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করে। আটককৃতদের বাড়ি নওগাঁ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। ১০ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা সীমান্ত থেকে নারী ও শিশুসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায়। গত ৮ জুন মঙ্গলবার সদর উপজেলার তলুইগাছা ও ভোমরা এবং কলারোয়া উপজেলার মাদরা সীমান্ত থেকে ৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও একজন মানব পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। তাদের বাড়ি মাদারীপুর, নড়াইল, যশোর, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামে। গত ৬ জুন রোববার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্ত থেকে তিন জনকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
এদিকে ৪জুন শুক্রবার ও ৫জুন শনিবার পৃথক অভিযানে সাতক্ষীরার ভোমরা, তলুইগাছা ও কুশখালী এবং কলারোয়ার হিজলদী সীমান্ত থেকে এক পাচারকারিসহ সাত বাংলাদেশিকে আটক করে বিজিবি। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা, যশোর, নারায়নগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের। এছাড়া ৫ জুন আরেক পৃথক অভিযানে কলারোয়ার হিজলদী বাজার থেকে শিশু-ও নারীসহ আরো ৫জন আটক করা হয়। এদের বাড়ি বরিশাল ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এদিকে গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার বিকালে কলারোয়ার কাকডাংগা ও মাদরা সীমান্ত থেকে একজন পাচারকারীসহ আরো ৪ জনকে আটক করে বিজিবি। আটককৃতদের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের।
আটককৃত এসব বাংলাদেশী নাগরিকদের সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সদর উপজেলার পদ্মশাখরা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এভাবে প্রায় প্রতিদিন বিজিবির অভিযানে সাতক্ষীরা সীমান্তের কোন না কোন এলাকা থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের আটক করা হচ্ছে। যারা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল চিকিৎসা অথবা কাজের সন্ধানে। এদের মধ্যে অনেকে বিজিবি’র নজর এড়িয়ে গোপনে দালালদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ফলে সীমান্তে বিজিবি’র কঠোর নজরদারি স্বত্বেও এসব গুটি কয়েক লোকের কারনে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে সংক্রমনের শংকা থেকেই যাচ্ছে।
সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল-মাহমুদ জানান, তার অধীনস্ত ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা গত ২৮ এপ্রিল হতে ১৪ জুন পর্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারী, টহল তৎপরতা এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে সর্বমোট ৫৭ জন বাংলাদেশী নাগরিক এবং ৩ জন মানব পাচারকারী আটক করেছে।
তিনি আরো বলেন, আটককৃতদের জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হবে।
ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আল-মাহমুদ আরো বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় লক ডাউন চলাকালীন জেলা প্রশাসন কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশাবলী সীমান্তবর্তী এলাকায় বাস্তজন্য বিজিবি’র জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও, কোভিড-১৯ এর সংক্রমন প্রতিরোধকল্পে সর্বক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করা, অবৈধভাবে সীমান্ত গমনাগমন না করা এবং কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে জনসাধারনকে সতর্ক করা হচ্ছে।