করোনাকালে দেখতে দেখতে চলে এল আরেকটি বর্ষা। একটি সুন্দর এবং মন ভাল করে দেয়া ঋতু হিসেবে বৃষ্টিমুখর বর্ষার কদর রয়েছে। তবে কেবল মানুষই নয়, গাছপালা, প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসও বর্ষাকাল উপভোগ করে। ফলে অনেকে বৃষ্টিতে ভিজতে বা বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় সতেজ কাটা ফল বা খাবার খেতে পছন্দ করলেও তা স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দিতে পারে। তবে, এই করোনাকালেও সতর্কতার সাথে বর্ষাকে উপভোগ করা যেতে পারে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ : বেশিরভাগ মানুষ বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করেন। এটি দেহ-মনকে সতেজ করে এবং মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবার বৃষ্টিস্নাত হওয়ার পর ডেটল, স্যাভলন বা বেটাডাইনের মতো জীবাণুনাশক দিয়ে গোসল করুন। এটি আপনাকে কয়েক লাখ ক্ষতিকর অণুজীব থেকে বাঁচাবে এবং আপনাকে সুস্থ ও ফিট রাখতে সহায়তা করবে।
সর্বদা হাত পরিষ্কার রাখুন : বাড়ির বাইরে, বাড়িতে ফিরে এবং কিছু খাওয়ার আগে সাবধানতার সাথে আপনার হাত ধুতে বা স্যানিটাইজ করতে ভুলবেন না। হাত জীবাণুমুক্ত রাখার স্বাস্থ্যকর অনুশীলনে হাতের ত্বকে থাকা প্রায় সমস্ত জীবাণু মারা যায়। বাড়ি ফেরার সাথে সাথে পা ধুয়ে ফেলাও আবশ্যক।
ভেজা জুতোকে না বলুন : বর্ষাকালে সময় আপনার জুতা পরিষ্কার এবং শুকনো রেখে কাজ করা এবং বাড়ি ফেরা প্রায় অসম্ভব। যদি জুতায় কাদা লেগে থাকে বা ভিজে যায়, তবে সেগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন এবং আবার পায়ে দেয়ার আগে সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিন। অন্যথায়, জুতার মধ্যে থাকা জীবণুগুলোর বংশ বিস্তার ঘটবে। বারবার পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ রাবারের জুতা বেছে নিতে পারেন।
পরিধানের কাপড় ইস্ত্রি করুন : ওয়ার্ড্রোব এবং আলমিরাসহ কাপড় রাখার স্থানগুলো সাধারণত শীতল থাকে এবং বৃষ্টিপাত বাড়ার সাথে সাথে স্যাঁতস্যাঁতে হতে শুরু করে। আর সেই আর্দ্রতার মধ্যে সেখানে রাখা কাপড়গুলোতে ছত্রাক বাসা বাধে। যেহেতু, জামাকাপড় সবসময় সবার পক্ষে রোদে দেয়া সম্ভব হয় না, তাই সেগুলিকে পরিষ্কার করার পর ইস্ত্রি করে পরিধান করাই সব থেকে বড় সমাধান।
মশার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন : বর্ষার সবচেয়ে ভয়ঙ্কার সমস্যাগুলোর একটি হ’ল মশার প্রজনন। মশারা আবদ্ধ পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাই আপনার বাড়িতে কোনও খালি জলাধার নেই এবং ড্রেনগুলো আটকে নেই, তা নিশ্চিত করুন। পাশাপশি, মশার তাড়ানোর তেল, কয়েল বা স্প্রে পর্যাপ্ত মাত্রায় ব্যবহার করুন।
জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন : বর্ষাকালে রাস্তাগুলো সাধারণত কাদা-পানিতে ভরা থাকে। এগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক অণুজীবের জন্য নিখুঁত প্রজনন পরিবেশ তৈরি করে। এর মধ্যে রাস্তার খাবারগুলো যত বেশি উন্মুক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তত বেশি সেগুলোতে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, পছন্দসই জাঙ্ক ফুড যত বেশি খাবেন, তত বেশি রোগক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাবার, ফলমূল এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কঠোরভাবে এড়ানো উচিত।
ভিটামিন সি’র মাত্রা বাড়ান : বছরের এ সময়টিতে ভাইরাস জ¦র, অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। এসময়ে সুস্থ থাকার জন্য আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। এটি করার অন্যতম সহজ উপায় হ’ল আপনার ভিটামিন সি গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া। বেশি করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ স্প্রাউট, তাজা সবুজ শাকসবজি, লেবু এবং কমলা খান।
ফল এবং সবজির যত্ন : বর্ষার সময় পরিষ্কার পানিতে ফল এবং শাকসব্জী ভালভাবে ধোয়া জরুরি যেহেতু জীবাণুগুলো ফল এবং সবজির ত্বকে লেগে থাকে। কেবলমাত্র রান্না করা বা সিদ্ধ শাকসবজি খাবেন। না হলে পানিবাহিত রোগের শিকার হতে পারেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান : দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, শরীর সতেজ রাখে এবং ফ্লু ও বর্ষায় সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর প্রতিরোধ করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন : ব্যায়াম বা শরীর চর্চ্চা দেহের ওজন হ্রাস করতে বা সঠিক ওজন ধরে রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, তা রোগ প্রতিরোধের পক্ষেও দুর্দান্ত। ব্যায়ামে হৃতপিন্ডে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, শরীরের রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে এবং সেরোটোনিন (সুখ হরমোন) উৎপাদনকে বাড়িয়ে দেয়। এসবই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আপনার দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
শুধুমাত্র শুকনো অবস্থায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে প্রবেশ করুন : যদি আপনার অফিস বা বাড়ি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং আপনি ভেজা অবস্থায় থাকেন, তাহলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে প্রবেশের আগে অপেক্ষা করুন। নিজেকে যতটা সম্ভব শুকানোর জন্য একটি তোয়ালে বহন করুন। আপনার ভেজা ত্বক এবং কাপড়ে এয়ার কন্ডিশনারের শীতল বাতাস গেলে ভয়ানক সর্দি-কাশির সংক্রমণ ঘটতে পারে।
অসুস্থ ব্যক্তির থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখুন : যেহেতু বর্ষার সময় প্রচুর লোকের মধ্যে ফ্লু বা সর্দি-কাশির সংক্রমণ ঘটে, তাই আপনাকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন, যাতে সংক্রমণগুলো আপনার শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ না করে।
অ্যালার্জেন থেকে নিজেকে রক্ষা করুন : বর্ষার সময় অ্যালার্জি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কোভিডের সাথে সাথে ধুলো, বাষ্প বা দূষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আপনার বাইরে বেরোনোর সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আপনার ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত অ্যালার্জি জনিত ওষুধগুলো সর্বদা আপনার সাথে রাখুন এবং বাসস্থান পরিষ্কার রাখুন। তথ্যসূত্র : ফার্মেজি।
খুলনা গেজেট/এনএম