জার্মান সম্প্রচারক সংস্থা স্পোর্টস্টুডিও-র খবর সত্যি হলে, ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন নিজেই হাসপাতাল থেকে ভিডিওবার্তায় ডেনমার্ক দলে তাঁর সতীর্থদের আবার মাঠে নামতে অনুরোধ করেছিলেন। দারুণ মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে ড্যানিশ খেলোয়াড়েরা মাঠে নেমেছেনও।
দারুণ সাহসের এই গল্পটা সুন্দর সমাপ্তি পেত ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাতে শেষ পর্যন্ত ডেনমার্ক জিতে গেলে। ম্যাচের ৪০ মিনিটে হঠাৎ মুখ থুবড়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে হাসপাতালে যাওয়া এরিকসেনকে তাতে দারুণ উপহার দেওয়া হতো।
কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোদিকে দুর্দান্ত গল্প লিখেছে এবারই প্রথম ইউরোতে সুযোগ পাওয়া ফিনল্যান্ড। কোপেনহেগেনে আজ ডেনমার্ককে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরো অভিষেক রাঙিয়ে দিয়েছে ফিনিশরা।
ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত ড্যানিশ আর ফিনিশদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিল। র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বর দল ডেনমার্ক একের পর এক দারুণ সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে পারেনি। একটা পেনাল্টিও মিস করেছে! উল্টো দিকে র্যাঙ্কিংয়ে ডেনমার্কের চেয়ে ৪৪ ধাপ পিছিয়ে থাকা ফিনল্যান্ড পুরো ম্যাচে বলার মতো সুযোগ তৈরিই করেছে একটি, ৫৯ মিনিটে সে সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন জোয়েল পোহইয়ানপালো। তাতেই অভিষেক রাঙানো ফিনল্যান্ডের।
ডেনমার্কের খেলোয়াড়দের নিয়ে তবু অবশ্য গর্বই করার কথা দেশটির মানুষের। এরিকসেনের ওভাবে মাটিতে পড়ে যাওয়া এবং এর পরের সবকিছু সবচেয়ে কাছ থেকে তো দেখেছেন তাঁরাই। এতকিছুর পরও যে আবার ম্যাচ খেলতে নামার সাহস দেখিয়েছেন, এ-ই তো বীরত্বগাঁথা লেখার মতো।
তবে ম্যাচটাকে ঘিরে মন খারাপ করা কোনো গল্প লিখতে হবে বলেই মনে হয়েছিল এরিকসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর। ম্যাচের ৪০ মিনিটে মাঠে হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে যান এরিকসেন। মাঠে প্রায় ১৫ মিনিট চিকিৎসার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উয়েফা তখন ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করে।
এরপর অবশ্য ডাক্তারদের প্রাণান্ত চেষ্টার পর জ্ঞান ফেরে এরিকসেনের। উয়েফা ম্যাচটি আবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু করার কথা জানায়। ৪৩ মিনিট থেকে আবার ম্যাচ শুরু হয়, এরিকসেনের বদলি হিসেবে ডেনমার্ক মাঠে নামায় মাথিয়ান ইয়েনসেনকে।
এরিকসেনকে ঘিরে শঙ্কা জাগানো ঘটনার আগে ম্যাচ যেভাবে চলেছিল, বিরতির পরও সেভাবেই চলতে থাকে। ৪-২-৩-১ ছকে ডেনমার্কের দ্রুতগতির আক্রমণ, আর বল পায়ে না থাকলে ৫-৩-২ ছকে সর্বস্ব দিয়ে রক্ষণকাজ চালিয়ে যাওয়া ফিনল্যান্ডের রক্ষণ সামলে পাল্টা আক্রমণে ওঠার চেষ্টা।
চেষ্টায় সাফল্য আসে ৫৯ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে উরোনেনের ক্রসে দারুণ হেড করেন পোহইয়ানপালো। ডেনমার্ক গোলকিপার ক্যাসপার স্মাইকেল পড়িমরি করেও সেটি ঠেকাতে পারলেন না। পুরো ম্যাচে ফিনল্যান্ড ওই একটাই শট নিয়েছে, সেটিই ডেনমার্কের গোলে থাকল, তাতেই গোল! ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ফিনল্যান্ডের প্রথম!
ডেনমার্ক এরপর আক্রমণের গতি আরও বাড়িয়েছে। বক্সে পোলসেনকে ফাউল করায় ৭৪ মিনিটে পেনাল্টিও পেয়েছিল। কিন্তু টটেনহামের মিডফিল্ডার পিয়ের-এমিল হইবিয়ার সেই দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন ফিনল্যান্ডের গোলকিপার হ্রাদেকি।
শেষ দশ মিনিটে প্রায় নিশ্চিত গোলের দু-তিনটি সুযোগ পেয়েও গোল আর বের করতে পারেনি ডেনমার্ক।