যশোরে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে করোনা, বাড়ছে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন তিনজন। নতুন করে ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের মাঝে।
সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে একশ’ ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭৩ জনের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ছয়শ’ ৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৮৮ জনের।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের রেডজোনে দু’জন ও ইয়োলোজোনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন, যশোর শহরতলির ঝুমঝুমপুর এলাকার সুমি খাতুন (১৪), শার্শার রঘুনাথপুর গ্রামের রফিউদ্দীন (৭০) ও মহেশপুর উপজেলার পুরন্দরপুর গ্রামের মোকছেদুল ইসলাম (৪৮)।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১০ জুন রফিউদ্দীন ও সুমি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন তাদের করোনা শনাক্ত হয়। হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে রফিউদ্দীন ও সকালে সুমির মৃত্যু হয়। এদিকে, ১১ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে মোকসেদুল ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তার মৃত্যু হয়।
যশোর পৌরসভা থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শনিবার নয়টি ওয়ার্ডে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত পৌর এলাকায় আটশ’ ৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে ইয়োলোজোনে একদিনে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন। সাম্প্রতি একদিনে এটি সর্বোচ্চ ভর্তির সংখ্যা। এ ওয়ার্ডে ১৯ বেডের বিপরীতে ৪২ রোগী রয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষের ১০টি বেডের বিপরীতে ২৯ জন ও নারীদের নয়টি বেড়ের বিপরীতে ১৩ জন ভর্তি আছেন। এই ওয়ার্ডে মেঝেতেও জায়গা নেই। ফলে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ওষুধের দোকান ব্যতিত অন্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা না রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। একইসাথে অপ্রয়োজনে মানুষকে যত্রতত্র ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। যদিও মানুষ অনেকটাই অসেচতনভাবে ঘোরাফেরা ও কেনাকাটা করছে।
সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, যশোরে করোনা সংক্রমণের হার গত কয়েকদিন বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রত্যেকের মাস্ক পরিধান করা জরুরি। একইসাথে যে কোনো উপসর্গ দেখামাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবার কথা তিনি জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, যশোরে করোনা শনাক্তের হার এখনও উদ্বেগজনক। যে কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় গত ২৪ ঘন্টায় ৩৮টি মামলা দিয়ে জরিমানা ও আদায় করা হয়েছে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ টি আই