করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উর্দ্ধগতি রোধে মোংলায় কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, দ্বিতীয়বারের মত আরও সাত দিনের বিধি নিষেধ জারি করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। রবিবার (৬ জুন) নতুন করে ৩৮ জনের টেষ্টে ২০ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। পৌর এলাকার জয়বাংলা সড়কে হাসিব মোল্লা (৫৫) নামের একজন করোনা পজেটিভ হয়ে মারা গেছেন।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আগামী ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণায় সাধারণ ভোটাররা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যে এখনই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করা হলে মহামারীর সংক্রমণ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে যাবে। তবে উপজেলা প্রশাসনও সাধারণ ভোটারদের সাথে মত প্রকাশ করে এই সময়ে নির্বাচন করতে নারাজ।
ভৌগলিক আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোংলা বন্দর। একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় বসবাস প্রায় দুই লাখ মানুষের। ঘনবসতি পূর্ণ এ উপজেলায় ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উপজেলাটি এখন করোনা হটস্পটে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ৭৪ শতাংশে দাড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এখানে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। উপজেলার বাসিন্দারা অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আগামী ২১ জুন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মজিদ, মোঃ খোকন ও আলমগীর হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একদিকে কঠোর বিধি নিষেধ আবার একই সময়ে নির্বাচন! এটাতো মরণ ডেকে আনা।
উপজেলার আরেক ইউনিয়ন চিলার বাসিন্দা কুলসুম বেগম ও জাহানারা খানম বলেন, ‘করোনার মধ্যে কিভাবে নির্বাচন হয়? এতে আরও বেশি করোনা হবে।’ এই সময়ে নির্বাচনের দরকার নেই বলেও জানান তারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের মোংলা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচন হচ্ছে একটা উৎসব, এই নির্বাচনে চায়ের দোকানে, মাঠে ঘাটে সবাই গায়ে গায়ে মিশে একাকার হয়ে যাবে। করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে মোংলায় নির্বাচন দেয়া হলে, যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিবে তা মোকাবেলা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের খবরে কিছুটা প্রচার প্রচারণার প্রস্তুতি নেয় প্রার্থীরা। এরই মধ্যে তাই ১০ জুন পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘মোংলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। সংক্রমণটির ভাইরাস হ্রাস করতে এবং আমরা সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছি। তাই এর মধ্যে একটা নির্বাচন হলে সেটি হবে খুবই আশংকাজনক পরিস্থিতি। তাই এই আশংকার কথাটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। মহামারীর মধ্যে নির্বাচন যাতে না করা হয়, খুব শিগগিরই এর একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত আসবে বলেও আশা করেন ইউএনও কমলেশ মজুমদার।’
মোংলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী না থাকায় আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আছেন। তাই এখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। ইউনিয়ন ছয়টিতে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৪০ জন।
খুলনা গেজেট/এনএম