‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর আকুতি করছি, ত্রান চাইনা একটি টেকসই বেড়িবাঁধ চাঁই’ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বসতঘর হারিয়ে মনের ক্ষোভ নিয়ে এমনটাই জানালেন জেলে গাবরিয়েল সরদার। এছাড়া সহায় সম্বল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটানো সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা উপজেলার শত শত অসহায় পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা সংবাদ কর্মীদের কাছে দু’হাত জোর করে এমন দাবী জানায়।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস কেড়ে নিয়েছে তাদের শেষ সম্বলটুকু। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারী সহায়তার জন্য তৈরী করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় জেলে ও স্থানীয়দের দুর্দশার সীমা নেই। এবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বড় ধরনের জীবনের ক্ষতি না হলেও নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে শেষ হয়েছে অনেকের আশ্রয় নেয়ার সম্বলটুকু। ভেসে যায় তাদের ঘরের নিচের মাটি, ঘের-পুকুরের মাছ সহ শেষ সহায়–সম্বল টুকু।
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চর আর করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের। এবারের ঘূর্ণিঝড়ে মোংলা উপজেলায় ৩শ হেক্টর চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে মৎস্য চাষিদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জোয়ারে তলিয়েছে উপকূলীয় এলাকার ৫শ ১০টি বসত ঘর আর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাড়ে ৬শ বসবাসকারী।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়রা জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদী ভাঙ্গনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাদের। যখন থেকে খবর পেয়েছি আম্ফানের এক বছর পর আবারো প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসছে, সেদিন থেকেই ঘরে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে তাদের কাছে বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। কত মানুষ আসে, প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু টেকসই বাঁধ দেয়না। জীবন বাঁচাতে সব সময়ই আতংঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। কখন যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজনসহ আমাদের সহায় সহায়–সম্বল টুকু।
চাদঁপাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোল্লা মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তলিয়ে গেছে পুকুর ও মৎস্য ঘেল। তাই সরকারের কাছে অবেদন, ত্রান সহায়তা না দিয়ে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ দিলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে। জীবনই যদি না থাকে তা হলে ত্রান দিয়ে কি হবে? বলে জানালেন স্থানীয় এ জনপ্রতিনিধি।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে আঘাত হানার কথাশুনে সকাল থেকেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী, সমাজ সেবক মোঃ হাসেম ফকির, সুলতার মেম্বার, সিপিপি উপজেলা টিমলিডার ও সেচ্ছাসেবক সহ এলাকার অন্যান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে নদী সংলগ্ন বুড়িরডাঙ্গা, জয়মনি, চিলা, কাইনমারী ও কানাইনগর এলাকায় গিয়ে লোকজনকে আতংঙ্কগ্রস্থ না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হওয়ায় বেশ কিছু বাড়ী ঘর তলিয়ে যায়। পানিবন্দী লোকজনকে দ্রুত শুকনো খাবার ও গৃহহীন মানুষদের থাকার ব্যাবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোংলা উপজেলাবাসীর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরী করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে সহায়তা ও পুর্নবাসনের জন্য।
সিডর, আইলা, আম্ফান আর ইয়াস’র মতো ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেতে তিনটি ইউনিয়নের ৪৫ হাজার অসহায় মানুষের একটাই কথা, ত্রান চাই না, পশুর, শ্যালা ও মোংলা নদী পাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ টেকসই বেড়িবাঁধ চায় তারা। ঝড় জলোচ্ছাসের সাথে যুদ্ধ করে বেচেঁ থাকা উপকূলবাসীর এটাই এখন একমাত্র দাবি।
খুলনা গেজেট/ এস আই