ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবনের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে এবং পৌরসভায় প্রবেশ করেছে। বুধবার (২৬ মে) দুপুরের পর ভরা জোয়ারের প্রভাবে সাগর ছিল প্রচন্ড উত্তাল সেইসাথে ছিলো মুষলধারে বৃষ্টি। যার কারণে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়।
এ সময় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে জোয়ারের পানি। কানাইনগর, কাইনমারী, চিলা, জয়মনি, বুড়িরডাঙ্গা, মাছমারা ও পৌরসভা এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। মোংলার প্রায় সাড়ে ৬শ’ পরিবার জলোচ্ছ্বাসে পানিবন্দী হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রথম পর্যায়ের খাদ্য সহায়তা পৌছে দেন উপজেলা প্রশাসন।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, দুপুরে খবর পাওয়ার সাথে সাথে ওই এলাকায় গিয়ে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি জরুরী খাদ্য সহায়তার শুরু করা হয়। প্রথমে শুকনা খাবার এবং রাতে তাদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যাদের কাঁচা ঘর ভেঙ্গে গেছে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণিমার ভরাগোনে সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল এলাকায় ঢুকে পরেছে লোনা পানি। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। সুন্দরবনের দুবলার চরের অন্যান্য জায়গায়ও স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ-ছয় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
বনের দুবলার চরের জেলেপল্লীর টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানান, সুন্দরবনের দুবলা ও এর আশপাশ এলাকার ভেতরে লবন পানি ঢুকেছে। এখানকার জেলে ও বন্যপ্রানীদের মিস্টি পানির এক মাত্র পুকুর তলিয়ে গেছে। বনে পানি ঢোকায় বাচ্চাসহ প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ হরিণ ও অন্যান্য প্রানী এ মিষ্টি পানির পুকুরের পাড়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানবে এমন খবরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল উপজেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রেখেছে সিপিপি সেচ্ছাসেবকদের। কন্টোল রুমের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে উপজেলা প্রশাসন।
নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড ও বন বিভাগ তাদের নৌযান সমুহ নিরাপদে সারিয়ে রাখা হয়েছে। বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে ঝুঁকিপূর্ণ ৮টি অফিসের বনরক্ষীদেরকে অফিস থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে ।
বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন জানান, সাগর ও পশুর চ্যানেলে বৈরী আবহাওয়া আর বৃষ্টির ফলে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বানিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বন্দরে সার, ক্লিংকার, পাথর, গ্যাস, ফ্লাই আ্যাশসহ ১১টি বাণিজ্যিক জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় এখানে অবস্থান করছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই