পল্লীকবি জসিম উদদীন তার ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় লিখেছেন, ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ; পাকা জামের শাখায় উঠি, রঙিন করি মুখ’। কবির এই চরণগুলোর সাথে আমি একমত হতে পারিনি। ঝড়ের দিন অর্থাৎ দুর্যোগকালীন সময়ে আম কুড়ানো আমাদের সুখানুভূতি দেয় না। আবার, এমন দূর্যোগে জাম গাছের শাখায় ওঠার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে কি আমরা এতদিন ভুল জেনে এসেছি?
বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে ‘ঝড়’ হলো ফ্যান্টাসি, উপভোগের বিষয়। গতবছর সুপার সাইক্লোন আম্পানের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বহু মানুষকে দেখেছি যারা এই দুর্যোগ নিয়ে রীতিমতো ট্রল করেছে। বলায় বাহুল্য, এদের বেশিরভাগই দেশের ঝুঁকিমুক্ত এলাকার বহুতল ভবনের বাসিন্দা।
দরজায় কড়া নাড়ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২৬ মে বিকাল বা সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। আসন্ন সম্ভব্য দূর্যোগে উপকূলের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্ততি নিয়েছে সরকার। আমরা সম্ভব্য ঝড়ের ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারি।
রেডিও-টেলিভিশনে কিছুক্ষণ পরপর ‘আবহাওয়া বুলেটিন’ প্রচার করে সতর্ক করা হবে। ঝড়ের তীব্রতা, ক্ষয়ক্ষতি ও উপকূলের কান্না দেখানো হবে। তারপরও অনেকেই এই দুর্যোগে সুখ খুঁজবেন, ফ্যান্টাসি খুঁজবেন। রাতারাতি আমাদের ভেতর এই উন্মাদনা তৈরি হয়নি অবশ্য। ভুক্তভোগী অর্থ্যাৎ যারা ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে থাকেন কিংবা যাদের আপনজনরা থাকেন, তারাই দুর্যোগ অনুধাবন করতে পারেন।
বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা দুর্যোগ নিয়ে উপহাস করবে না, এটাই প্রত্যাশা করি। ঝড়ে গাছের আম পড়ে গেলে সেটাকে ‘ক্ষতি’ বলে। যারা ক্ষতির ভেতর সুখানুভূতি খুঁজে পান, তাদের মানসিক পরিপক্বতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি