উপকূলীয় এলাকায় আঘাতের সময় ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, ভয়ংঙ্কর রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আঘাতের পর পরই হতে পারে জলোচ্ছ্বাসও। বর্তমানে সমুদ্র বন্দর ও উপকূলে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে অবহাওয়া অফিস। এদিকে পূর্বে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে সর্বস্ব হারানো উপকূলবাসীর সময় কাটছে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে। রাত যতই গভীর হচ্ছে, ভয় ততই বাড়ছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলবাসীর।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় আঘাত করলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব তীব্রভাবে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বুধবার ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এছাড়া বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এলাকাগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ পূর্বাভাস দিয়ে মোংলা বন্দরসহ দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে ঘুর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মোংলাসহ খুলনাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে ও ভেঙে ওই পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলে পল্লীগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে। ইতিমধ্যে দুবলা ফরেস্ট অফিস, স্টাফ ব্যারাক, মসজিদ, রান্নাঘর সন্ধ্যার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া একমাত্র মিষ্টি পানির উৎস পুকুরটাও লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। হরিণের ছোট বাচ্চাগুলো আশ্রয় নিয়েছে পুকুর পাড়ে উচু স্থানে। কিন্ত অন্যান্য বন্য প্রাণীগুলো কি অবস্থায় আছে, তা জানা সম্ভব হয়নি বলে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক। দূর্যোগের সময় মানুষ, বণ্যপ্রাণী, বন কতটা অসহায় তা উপকূলে না থাকলে কোনদিনই জানা হতো না।
দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার থেকেই জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে না পড়লেও পানির উচ্চতা বেড়েই চলছে। মোংলা উপজেলা প্রশাসন এবং সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা উপকূলবাসীকে উঁচু স্থানে নিরাপদে থেকে সাবধানে চলাচল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। তবে সংকেত বাড়ার সাথে সাথে তারা যেন আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যায় সে জন্য মাইকিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বিকালে এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মোংলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পরিমাণে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বেই মোংলা ও এর আশ-পাশ নদী সংলগ্ন নিচু এলাকার মানুষদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে এবং যেখানে তারা আশ্রয় নিবে সেখানে করোনা মহামরী প্রতিরোথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন উপমন্ত্রী।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি