অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাগেরহাটের চিতলমারীতে বোরো ধানের ভাল ফলন হয়েছে। এ বছর এখানে কৃষি বিভাগের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৬৭৩ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদিত হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন ধান। সরকারি ভাবে এ উপজেলা থেকে ১ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে।
প্রতি মন ধানের দাম ১ হাজার ৮০ টাকা (প্রতিকেজি ২৭ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। খোলা বাজারে ব্যাপারীরা প্রতি মণ ধান কিনছেন ৮৫০ টাকা দরে। তবুও বহুকষ্টে উৎপাদিত ধানের ভাল ফলন ও দামে খুশি এ উপজেলার কৃষকরা। রবিবার (২৩ মে) দুপুরে এমনটাই জানালেন শ্যামপাড়া গ্রামের কৃষক বাবলু মন্ডল, সুরশাইল গ্রামের মুন্না শেখ ও কুরমনি গ্রামের টিপু ফরাজী।
তারা আরও জানান, বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাই কঠোর পরিশ্রমে উৎপাদিত ধান গোলায় না ভরে ফড়িয়া ও ব্যাপারিদের কাছে কমদামে বিক্রি করছেন। এছাড়া চিতলমারী খাদ্য গুদামের কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় এ উপজেলার কৃষকদের ধান নিয়ে যেতে হয় বাগেরহাট, কচুয়া, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট খাদ্য গুদামে। সে জন্য অধিকাংশ কৃষক সেখানে ধান নিয়ে যেতে না পারায় সরকারি মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষকরা অতিদ্রুত চিতলমারী উপজেলার খাদ্য গুদামের নির্মান কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট ২১টি ব্লক রয়েছে। একুশটি ব্লকে এবছর বোরো মৌসুমে ২৮ হাজার ৫২৮ একর জমিতে হাইব্রিড ও ৩৮৩ একর জমিতে উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে। এখানের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার এই ধান চাষের সাথে জড়িত। ধানের উপর তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড অনেকটা নির্ভর করে। উপযোগী আবহাওয়া, পোকা-মাকড়ের কম উপদ্রব ও যথাযথ পরিচর্যায় এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর এখানে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৬৭৩ মেট্রিক টন। উৎপাদিত হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন ধান। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন বেশী। উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড শক্তিশালী হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আদুরী রানী ব্রহ্ম জানান, ধান-চাল কেনার চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এ বছর সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা (প্রতি মণ ১০৮০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর এ উপজেলা থেকে সরকারি ভাবে ১ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে বাগেরহাট খাদ্য গুদামে ৫৭৯ মেট্রিক টন, কচুয়া ১৭৮ মেট্রিক টন, মোল্লাহাট ৩৭৩ মেট্রিক টন ও ফকিরহাট খাদ্য গুদামে ৭৭৯ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। এ পর্যন্ত ৩০০ মেট্রিক টান কেনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
চিতলমারীর ধান ব্যবসায়ী বাপ্পী সাহা, শহীদ মোল্লা, মোঃ আবুল শেখ, মনির শেখ ও সবুর শিকদার জানান, এ উপজেলার উৎপাদিত ধান ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রাইস মিলে বিক্রি হয়। মিল থেকে তারা যেমন দাম পান কৃষকের কাছ থেকে সে রকম দামেই ধান কিনে থাকেন। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ধানের দাম বেশী। আর এ বেশী দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি।
খুলনা গেজেট/ এস আই