বাগেরহাটে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রানীকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৯ মে) বিকেলে বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রানীর হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন।
শেষ বয়সে এসে অর্থ সহায়তা পেয়ে খুশি ৭৬ বছর বয়সী বীরাঙ্গনা। তিনি বলেন, স্বামী হারানোর শোক ও পাকবাহিনীর অত্যাচারের যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। কেউ কোনদিন খোঁজ নেয়নি আমার। খোঁজ নেয়নি আমার মেয়েদের। আমার কোন ছেলে নেই, স্বামী হারিয়ে দুই মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন চালিয়েছি। শেষ বয়সে এসে আমাকে এই যে সম্মান দেওয়া হল এ জন্য আমি খুশি।
বক্তারা বলেন, পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদের স্ত্রী একজন বীরাঙ্গনা নারী স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সরকারি সহযোগিতা বঞ্চিত থাকবে এটা খুব কষ্টের। এটা শুধু সংশ্লিষ্টদের দায় নয়, এই দায় আমাদের সবার। এরই মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে মানদা রানী যাতে সরকারি স্বীকৃতি ও সহযোগিতা পায় এ জন্য চেষ্টা করার ঘোষণা দেন বক্তারা।
ঘাতক দালাল কমিটির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ঘাতক দালাল কমিটির খুলনা-র সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্রনাথ সেন, ঘাতক দালাল কমিটির বাগেরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি, শহীদ স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া নিপু, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক গবেষক দ্বীপবেন্দু দ্বীপ। এসময়, সাংবাদিক বাবুল সরদার, মারদা রানীর মেয়ে লিলিমা রায়, লিপিকা বোষসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের জুন মাসে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে হামলা করে পাকহানাদার বাহিনীর সৈন্যরা। এসময় দুই সন্তানের জনক নির্মল রায়কে হত্যা করা হয়। হত্যার পরে কোলে থাকা দেড় বছরের মেয়ে লিপিকা বোষকে ছুড়ে ফেলে পাক সৈন্যরা ধর্ষণ করেন মানদা রানীকে। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি ও স্বামী হারানোর ব্যাথা বুকে নিয়ে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে পাননি সরকারি স্বীকৃতি। বীরাঙ্গনা হিসেবে জোটেনি কোন সহযোগিতা।
খুলনা গেজেট/ এস আই