অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন খারিজ করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক এ নির্দেশ দেন। আদালত সাংবাদিক রোজিনার জামিন শুনানি জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য্য করেছেন। এর আগে সকালে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে রোজিনা ইসলামকে আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানা।
এর আগে সকাল আটটার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা থেকে পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতে নেওয়া হয়।
শুনানিতে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, এই মামলাটি একটি ত্রুটিপূর্ণ মামলা। এই মামলায় দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ এবং অফিসিয়ালস সিক্রেসি অ্যাক্ট ৩ ও ৫ ধারায় যে মামলা করা হয়েছে সেটি মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেননা এই মামলায় যে ডকুমেন্টের কথা বলা হয়েছে ওই ডকুমেন্টের কথা মামলার এজাহারে বর্ণনা নেই। মামলায় যে জব্দ তালিকা দেখানো হয়েছে এই জব্দ তালিকার ডকুমেন্টও আসামির কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি। তা উদ্ধার হয়েছে একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে। কাজেই আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও মানহানিকর।
তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি যদি দণ্ডবিধি ৩৭৯ ধারা বিশ্বাস করতে হয় তাহলে চুরি হতে হবে প্রকাশ্য স্থানে অথচ ঘটনাটি ঘটেছিল সচিবালয়ে। তিনি তার মহান পেশা পালন করতে গিয়ে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া এরই মধ্যে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। তিনি মহান পেশা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আজকে পরিস্থিতির শিকার। আমাদের বক্তব্য আদালত শুনে রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। এরপর জামিন শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন।
এদিকে রোজিনা ইসলাম এর বিপক্ষে অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ১১টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ্ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) এই প্রেস ব্রিফিং বয়কটের ঘোষণা দেন।
সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। এরপর রাতেই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় মঙ্গলবার বেলা ১১টার একটু পরে সিএমএম আদালতে তোলা হয় রোজিনা ইসলামকে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রোজিনা ইসলাম কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশসহ (২০১৪) বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম