খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ২
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ, মাঝরাতেও ফেরিঘাটে উপচে পড়া ভীড়,

গেজেট ডেস্ক

জীবিকার তাগিদে ঈদ শেষে আগেভাগে মাঝরাতেও ঢাকার পানে ছুটছেন হাজারো কর্মজীবী মানুষ। ঈদের আগে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে বেশ কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গগামী মানুষ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য ভিড় করেন।

ঈদ শেষে এখন সন্ধ্যার পর থেকে মাঝরাতে ঢাকায় মানুষের সেই ভিড় বেড়েছে। মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে করে শিমুলিয়া ঘাটে ঘুমকে হারাম করে মাঝরাতে আসা হাজারো যাত্রীর চাপ রয়েছে।

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবারও গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা না করে মাঝরাতে ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণ জনপদের কর্মজীবী মানুষেরা।

রোববার (১৬ মে) রাত থেকে দিবাগত মধ্যরাত ২টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট হয়ে হাজারো মানুষ শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করেছেন। লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গন্তব্যে ফিরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নানা যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন। অনেকে হেঁটেই রওনা হয়েছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) এজিএম শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, জরুরি পরিষেবার যানবাহন ও যাত্রীদের পারাপারের জন্য ১৬টি ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু জরুরি যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ছেন। গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। এতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে পারে। যাত্রীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই দেখা যায়নি। শিমুলিয়ায় ঢাকার দিক থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানালেন শফিকুল ইসলাম।

ঈদযাত্রার সঙ্গে ভাইরাস যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থল এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে মানুষ যে যেভাবে পারছেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়িতে গেছেন। ফেরিতেও ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও। ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের চলাচলরত ফেরিতে ইতিমধ্যে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

ঝুঁকি নিয়ে সেই ঈদযাত্রা ঠেকানো না গেলেও এখন মানুষের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করা যায় কীভাবে, সেই পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি বলেছিলেন, এ লকডাউনের মধ্যে আবার যদি লোকজন এভাবে সারারাত-সারদিন জীবিকার তাগিদে ফেরে, তাহলে এটা অবশ্যই বিপজ্জনক হবে। এ কারণে এই ফেরাটা যদি একটু বিলম্বিত করা যেতো তাহলে ভালো হয়। এছাড়া যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই বিপদ এড়াতে সরকার ইতোমধ্যে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে যাত্রীরা নদীর স্রোতের মতো মাঝরাতে ফেরি যোগে ঢাকায় ফিরছেন। এতে যাত্রীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনসহ ঘাট কর্তৃপক্ষকে। যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে রাত থেকে সব ফেরি (১৬টি) চলাচল করেছে। এতে হাজারো যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে দক্ষিণবঙ্গের ব্যস্ততম শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট। ফেরিতে রোগী ও লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে কয়েক হাজার যাত্রী পার হচ্ছেন ঢাকার উদ্দেশে। বিআইডবিব্লউটিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পর নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা যাত্রী পারাপারে উপচেপড়া ভিড়ে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। রোববার রাত থেকে শিমুলিয়াঘাটে ছুটে আসতে থাকেন রাজধানী ঢাকার কর্মমুখী যাত্রী সাধারণ। এতে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নৌরুটে হাজারো যাত্রী নিয়ে পণ্যবাহী যানবাহন বোঝাই করে ঘাট ছেড়ে যায় একের পর এক ফেরি।

বিআইডব্লিউটিসি’র শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে সব কয়টি ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। রোববার রাত থেকে শুরু করে মাঝ রাত থেকে এ নৌরুটে পণ্যবাহী যানবাহনসহ ঢাকামুখী যাত্রীদের নিয়ে স্বাভাবিকভাবে ফেরি চলাচল করেছে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ফেরিতে বেশ চাপ রয়েছে। লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ফেরিতে যাত্রীচাপ বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। এতে আসা যাত্রীদের সামাল দিতে আমাদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (টিআই) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ অব্যাহত রয়েছে। সারারাত যাত্রীদের এ চাপ থাকলেও যানবাহনের তেমন চাপ নেই ঘাট এলাকায়। বর্তমানে শিমুলিয়া ঘাটে ৫ শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। গভীর রাত হওয়ায় শিমুলিয়া ঘাটে এসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে গণপরিবহন না থাকায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকামুখী কর্মজীবী মানুষেরা।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!