ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে। সোমবার (১০ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পরপরই এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর আল জাজিরা ও বিবিসির।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, সোমবার (১০ মে) স্থানীয় সময় বিকেলে গাজার হামাস অধ্যুষিত উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট হামলা চালানো হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে সিরিজ বিমান হামলা চালায়। এতে ২০ জন নিহত এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বিবিসিকে বলেছেন, তারা (ইসরায়েলি বাহিনী) গাজায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ শুরু করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটা শুরু হয়েছে এবং এরই মধ্যে তিন হামাস জঙ্গিকে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে।
ইসরায়েলের এই হামলায় ইজ্ আদ-দীন আল-কাসসাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ফায়াদ নিহত হয়েছেন বলে হামাস সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে।
হামলার পর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। তারা রেডলাইন অতিক্রম করায় ইসরায়েল পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে। ইসরায়েল সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে পাল্টা জবাব দেবে। যারা ইসরায়েলে আক্রমণ করবে, তাদের অবশ্যই চড়া মূল্য দিতে হবে।
তবে চলমান এই সংঘাত স্বল্প সময়ের জন্য চলতে পারে বলে মনে করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী এবং জাররাহ এলাকায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উত্তেজনা চলছে। এর মধ্যে কয়েকদিন পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ঢুকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়।
পবিত্র রমজানের জুমাতুল বিদা এবং মুসলিমদের পবিত্র রাত শবে কদরেও আল-আকসায় তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিরা এর প্রতিবাদ করে আসছেন। এরমধ্যেই প্রতিশোধ হিসেবে হামাস ইসরায়েলে দিকে রকেট হামলা চালায়।
https://twitter.com/i/status/1391793058237358084
এদিকে, একই দিন আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অগ্নিশিখা এত বড় ও উজ্জল ছিল যে, পূর্ব জেরুজালেমের শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা গেছে সেই আগুনের শিখা।
বিস্ফোরণের ফলে ইসরায়েল পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ সে সময় মসজিদ চত্বর ও তার আশাপাশের এলাকার অন্তত ৩৩১ জন আহত হয়েছেন।
اشتعال أشجار داخل المسجد الأقصى خلال الاشتباكات مساء اليوم pic.twitter.com/Z9plTgEJkr
— الصحفي نضال سلامه (@nidal_news) May 10, 2021
গত বেশকিছুদিন ধরেই গাজা এলাকায় ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ চলছিল জেরুজালেমে। রোববার (৯ মে) লাইলাতুল কদরের রাতে আল আকসায় নামাজ আদায় শেষে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা বিক্ষোভ শুরু করলে তা দমন করতে তৎপর হয় ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই দিনের সংঘাতে অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছিলেন। ওইদিনের সংঘর্ষের পর থেকে আল আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
কিন্তু ইসরায়েলের সরকার এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। হামাস এই হামলা শুরু করার কিছুক্ষণ পরই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
এদিকে হামাস রকেট হামলা শুরু করার কিছুক্ষণ পরই আল আকসা মসজিদ চত্বরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটল বা এর জন্য কারা দায়ী তা এখনো জানা যায়নি।
এদিকে, ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা ও সেনা সদস্যদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের গত কয়েক দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইসরায়েল ও তার সীমান্তবর্তী এলাকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় যে ভয়াবহ সংঘাত হচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাইডেন প্রশাসন খুবই উদ্বিগ্ন।