টেস্টে খুব বেশি অর্জন নেই বাংলাদেশ দলের। দেশের বাইরে আরো হতশ্রী অবস্থা। এর মধ্যেও যা কিছু অর্জন করা গেছে, তার সিংহভাগই এসেছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। এবার লঙ্কায় অপ্রতিরোধ্য টাইগাররা। ক্যান্ডিতে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৫৪১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের দল।
প্রথম ইনিংসে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওপেনার সাইফ হাসান বাদে সবাই রানের দেখা পেয়েছেন। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেন অভিষেক সেঞ্চুরি পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংয়ে ১৬৩ রান করেন তিনি। এছাড়া দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া মুমিনুলের ব্যাট থেকে আছে ১২৭ রান। ৯০ রান করেন তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৬৮ ও লিটন দাসের ব্যাট থেকে আসে ৫০ রান।
টেস্ট ম্যাচে মাঠে নেমে বাংলাদেশ ভালো দিন কাটিয়েছে এমন পরিসংখ্যান হাতেগোনা। ক্যান্ডি টেস্টের চিত্র ভিন্ন। আগের দুই দিন চালকের আসনে বাংলাদেশের নাম। তৃতীয় দিন ৪ উইকেট হারানো টাইগাররা ৪৭৪ রান নিয়ে আবার ব্যাটিং শুরু করে। এদিন সকালেই টেস্টে নিজের ২৩তম ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। পরে তামিমকে ছাড়িয়ে এই ফরম্যাটের সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে যান।
আগের দিন ২৫ রানে অপরাজিত থাকা লিটন মুশফিকের পর ব্যক্তিগত অর্ধশতকের স্বাদ পান। পরে অবশ্য বিশ্ব ফার্নান্দোর তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ফেরেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা সুবিধা করতে পারেননি। আউট হওয়ার আগে মিরাজ ৩ ও তাইজুল করেন ২ রান। এরপর ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৫৪১ রান জমা হলে মধ্যাহ্নভোজের আগেই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ ছিল ৬৩৮ রান, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার গলে। পাঁচশ ছাড়ানো ইনিংস আছে আরো একটি। ৫১৩ রান এসেছিল ২০১৩ সালে, চট্টগ্রামে। এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহে থাকা চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে ৫৪১ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ দল।
পাঁচদিনের টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা চলছে, বৃষ্টি আর আলোক স্বল্পতা দেখা না দিলে হয়তো দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলেই ইনিংস ঘোষণা করে দিত সফরকারীরা। ম্যাচের শুরুতে টস জিতে সাহসী শুরু টাইগারদের। উইকেটে ঘাস আর স্কোয়াডে লঙ্কান পেসারদের আধিক্য দেখেও আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। যদিও লঙ্কান অধিনায়ক টস হারের পর জানান, জিতলে আগে ফিল্ডিংই নিতেন তিনি।
টেস্টে বল হাতে বেশ ধারাবাহিক সুরাঙ্গা লাকমাল। একাদশে আছেন গতির ঝড় তোলা লাহিরু কুমারাও। তবুও নিজেদের লক্ষ্য থেকে একেবারে সরেনি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। সাইফ হাসান ব্যর্থ হলেও স্বাগতিক বোলারদের চোখে চোখ রেখে লড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকরা। এতে একাধিক রেকর্ডও হয়েছে, নিজেদের অর্জনের খাতা ভারি করেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা।
ম্যাচের আগের দুই দিনই লঙ্কান বোলারদের হতাশায় পুড়িয়েছেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। প্রথম দিনে মাত্র ২ উইকেটে হারিয়ে স্কোর বোর্ডে তোলেন ৩০২ রান। দ্বিতীয় দিনেও উইকেট পড়ে মাত্র দুটি। বাইশ গজে যেমন ধৈর্য দেখিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা, তেমনি হতাশার সাগরে পুড়েছেন লঙ্কান বোলার।
ইনিংসের ১২১তম ওভারের কথা ধরা যাক, লাকমালের করা বলটি মুমিনুল হকের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে প্যাডে আঘাত হানে। জোড়াল আবেদন লঙ্কান শিবিরে, তাতে বিন্দুমাত্র সাড়া নেই ফিল্ড আম্পায়ারের। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাৎক্ষণিক রিভিউ নেয় ফিল্ডিং সাইড, টেলিভিশন রিপ্লেতে স্পষ্টত দেখা যায়, বল পিস করে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে।
উইকেটের জন্য মরিয়া লঙ্কানরা মুশফিক ক্রিজে আসলে তার খেলা প্রথম বলেই লেগ বিফোরের জন্য মরিয়া আবেদন জানান, অথচ খালি চোখেই স্পষ্ট, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে পায়ে লেগেছে বল। গত দুদিনে বাংলাদেশ দলের এক একটি উইকেট ছিল স্বাগতিক শিবিরের অমূল্য সম্পদ। নাহলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশের মিশনে এখনো পয়েন্টের খাতা খালি থাকা একটি দলের কোনো ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পেরে এমন বিজয় উল্লাসে মাতার কথা নয়!
খুলনা গেজেট/এনএম