রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ পরবর্তী যুগের অন্যতম কাব্যমহীরুহ ও মানবিক কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যু এই সময় কালের জন্য ধর্ম নিরপেক্ষ ও মানবিক আন্দোলনের পক্ষে বড় ক্ষতি হয়ে গেল তা বলাই বাহুল্য । দুপুর পৌনে বারোটা নাগাদ খবরটা যখন কলকাতার কবি গালিব ইসলামের কাছে পেলাম তখন অত্যন্ত অবাক হয়ে যাই। এগারোই এপ্রিল থেকে যখন সর্দি-জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হলেন তখন আমাদের ঘাড়ে একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
চৌদ্দই এপ্রিল যখন তার করোনা পজেটিভ ধরা পড়ল তখন সংশয়টা আরো বেড়ে গেল। এক বছরের করোনা আবহে কত প্রতিভা বা কত আপনজনকে হারালাম দুই বাংলার তা লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু শঙ্খ ঘোষের মৃত্যু আমাদেরকে বেশ অনেকটাই অভিভাবকহীন করে দিল। একটি ধর্মনিরপেক্ষ অথচ মানবিক মুখ। তাই দেখা যায় বাবরি ধ্বংস, নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর জমি আন্দোলন, কলকাতার পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড কিংবা কলকাতা লাগোয়া কামদুনি ধর্ষণ অথবা দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ড সব কিছুতেই কবি শঙ্খ ঘোষকে শুধু প্রতিবাদী করেনি, তিনি রাস্তায় নেমেছেন।
আবার দুই বঙ্গের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে তিনি প্রসারিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। কোনো অন্যায়ের সঙ্গে তিনি আপস করেননি। আবার কোনো শাসক দলের সঙ্গে তিনি আপস করেননি।চাটুকারিতা করেননি। ভারতের প্রধান শাসক দল বিজেপির বিভাজন নীতি বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে হত্যা করছে, সুস্থ চেতনার আকাশকে দূষিত করছে। সে সময় কিন্তু একটা সময়ের জন্য ঘরে বসে থাকেননি এই কবি।রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন। বাবরির জায়গায় যখন রামমন্দির তৈরি করার রায় দিচ্ছে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট তখনো তিনি প্রতিবাদী হয়েছেন। আর এ স এস বাহিনীর হাতে একের পর এক যখন খুন হচ্ছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা কালবুর্গী, দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে, তখন যার নেতৃত্বে প্রতিবাদী আন্দোলনে কলকাতার রাজপথ কেঁপেছিল তার নাম কবি শঙ্খ ঘোষ। ডিগ্রি কোর্সে পড়ার সময় তার ‘বাবরের প্রার্থনা’ কবিতা পড়ে আমি তার একজন গুনমুগ্ধ পাঠক হয়ে গিয়েছিলাম।
তারপর কলকাতাতে বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক, প্রতিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনে রাজপথে তার সঙ্গে দেখা হোত। এইরকম একজন কাব্যমহীরুহ ক’ টা পুরস্কার পেলেন সেটা আমার কাছে বড় নয়, সবচেয়ে বড় হল, তিনি একটি মানবিক, প্রতিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ মুখ। তার মৃত্যুতে দুই বাংলা একজন মানবিক মুখকে হারালো। ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক আন্দোলনের বড়সড় ক্ষতি হল।
খুলনা গেজেট/কেএম