খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

ফয়লায় চিংড়ি পোনা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার চাঁদাবাজি

মেহেদী হাসান, রামপাল

রামপালের ফয়লায় নিষিদ্ধ চিংড়ি রেণু পোনা পরিবহন ও বিক্রির সহায়তার নামে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে দীর্ঘ দিন ধরে এমন চাঁদাবাজি করে আসছে চাঁদাবাজ চক্রের চার সদস্য। এর মধ্যে রামপাল প্রেসক্লাবের এক সদস্য ও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন আহরণ নিষিদ্ধ চিংড়ির রেণু ঢাকা- মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লাহাট চিংড়ি পোনার আড়তে আনা হয়। পরে ওই রেণু আড়তের বিভিন্ন ঘরে রেখে বিক্রি করা হয়। বিক্রি করা ওই রেণু ফয়লা বাজার থেকে পিকআপে করে খুলনা-মোংলা মহাসড়ক দিয়ে রূপসা সেতু পার করে নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। আহরণ নিষিদ্ধ ওই রেণু মাঝে মাঝে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা রূপসা সেতুতে আটক করে তা নদীতে অবমুক্ত করে।

ফয়লা বাজারে বসে চার সদস্যের একটি প্রতারক চক্র পথে কোস্ট গার্ডের হয়রানি বন্ধের জন্য রেণু পরিবহন করা প্রতিটি পিকআপ থেকে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে একজন পোনা ব্যবসায়ী বলেন, রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের কুমলাই গাববুনিয়া এলাকার কথিত সাংবাদিক ও তার সাথের আরো তিন সদস্য কোস্ট গার্ড, বিভিন্ন এলাকার চেকপোস্ট ও থানা ম্যানেজ করার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।

সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফয়লাহাট চিংড়ি পোনার আড়ত থেকে রেণু নিয়ে ঢাকা মেট্রো-ড-১১-৭১১৮ নং এর একটি পিকআপ পাইকগাছার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রুপসা সেতুতে কোস্ট গার্ড যাতে কোন হয়রানী না করে তার জন্য ওই পিকআপের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এভাবে ওই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

সূত্র জানায়, একটি অসাধু রেণু পোনা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের অবৈধ ব্যবসাকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে পোনা পরিবহনে টাকা দিয়ে থাকেন। এই টাকার ভাগ বাটোয়ারার একটি অংশ কথিত সাংবাদিকরাও পেয়ে থাকে বলে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত কথিত সাংবাদিকের কাছে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার আড়তে চিটাগং ও কক্সবাজার থেকে পোনা আসে আমি শুধু বাজারে বসে বেচাকেনা করি অন্য বিষয় জানিনা।

প্রতারক চক্রের প্রধান হোতার সাথে মুঠো ফোনে ব্যবসায়ী পরিচয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ফোনে না বলে দেখা করুন। পরে ব্যবসায়ী সেজে শনিবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ১১ টায় ফয়লায় জনৈক ব্যবসায়ীর আড়তে গিয়ে তার সাথে দেখা করলে সে একটি কাগজে লিখে হিসাব দেন কোথায় কত টাকা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, কাটাখালী হাইওয়েতে ৫ শ, রূপসা টোল প্লাজায় ৮ শ, অন্য এক জায়গাতে ২ হাজার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), ওপি ২ হাজার, ডুমুরিয়ায় ৫ শ, চুকনগর ৫ শ, জাতপুর ২ শ, তালায় ৩ শ, কপিলমুনি ২ শ ও পাইকগাছায় ৫ শ করে প্রতি ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে নিরাপদে পোনা পরিবহন করতে হয়।

এ ব্যাপারে মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম হাবিবুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোস্ট গার্ডের কোন সদস্য যদি টাকা নেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকে তাহলে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কোস্ট গার্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে তাদের আাটক করা হবে।

ফয়লাহাট চিংড়ি পোনা আড়ত মালিক সমিতির একজন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে বলেন যাদের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক। তারা কোস্ট গার্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে পিকআপ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা নিচ্ছে। এটা বন্ধ করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি ।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!