বছর পাঁচেক আগের কথা। স্ত্রীর শখ পূরণ করতে খুলনা বড় বাজার থেকে তের শত টাকার বিনিময়ে ময়না ও গয়না (একজোড়া কিং কবুতরের বাচ্চা) কে খুশি মনে বাসায় নিয়ে আসি। সপ্তাহ না যেতেই ময়না অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওর ঘাড় বেঁকে যায়। চলতে ফিরতে কষ্ট হয়। মুখ দিয়ে নিজে খাবার খেতে পারে না। ঔষধপত্র খাওয়াতে থাকি। কোন কিছুতেই লাভ হয় না। দিন দিন ওর শরীর শুকাতে থাকে।
একদিকে ময়নাকে সুস্থ করা, অন্যদিকে গয়নাকে অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করা নিয়ে ভাবতে থাকি। গয়নার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ওকে পাঁচ শত টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দিই। ময়না পানি ছাড়া অন্য খাবার নিজে খেতে পারে না। ময়নাকে আমি পাঁচ বছর ধরে খাওয়ায় চলেছি। প্রথম দিকে প্রতিদিন তিনবার খাওয়াতে হতো। এখন ওর বয়স হয়েছে। তাই এখন সকাল-বিকাল দু’বেলা খাওয়ালে চলে। কোন দিন সময়ের হেরফের হলে ও রাগ করে। আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রীর হাতের তুলে দেয়া খাবার ও খেতে চায় না। আমার হাতের খাবার খেতে ও অভ্যস্থ হয়ে গেছে। আমি ময়নাকে আনন্দচিত্তে মুখে তুলে খাওয়াই। ওর মাথার হাত বুলিয়ে দিলে ও মাথা নিচু করে থাকে। আমার স্ত্রীর ঈর্ষা হয়। সে বলে,”আমি যদি ময়না হতে পারতাম….।” মাঝে মাঝে ময়নার রাগ বেশি হলে আমাকে ঠোকর মারে। আমি শরীরে ব্যথা পাই, কিন্তু মনে কোন ব্যথা অনুভব করি না।
ময়না আমার চলমান জীবনের সাথে মিশে গেছে। মানুষ আশায় বুক বাঁধে। প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে থাকে। ময়না একদিন সুস্থ হবে, আমিও এই আশায় আছি। আল্লাহ তায়ালা যেদিন ময়নাকে সুস্থ করবেন, সেদিন থেকে আমিও আবার পথে পথে গয়নাকে খুঁজে ফিরব। যদি গয়নাকে খুঁজে পাই যে কোন মূল্যে ওকে ফিরিয়ে আনবো ময়নার কাছে। এ আমার প্রত্যাশা। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)।
খুলনা গেজেট/এনএম