পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের এখনো ছয় দফা বাকি। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানের বাম- কংগ্রেস- আইএসএফ গঠিত সংযুক্ত মোর্চার ঐতিহাসিক সমাবেশে ফুরফুরার তরুণতুর্কী পীরজাদা ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকী যে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তিনি মনের কথাটা খুলে বলেছেন তা তাকে দিনকে দিন জনপ্রিয় করে তুলেছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই আব্বাস সবার কাছে এখন এক ‘কমন ভাইজান’- এ পরিণত। অথচ এই আব্বাস সিদ্দিকীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বা তার দলের বিধায়ক সৌকত মোল্লা একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন । যত আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন ততই তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে চলে যাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকে ‘চ্যাঙড়া’ বলতেও ছাড়েননি। তবুও তার জনপ্রিয়তাতে ভাটা পড়েনি। কেন ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকী আজ জনপ্রিয়? তার একটা কারণ , আব্বাস সিদ্দিকী ধর্মভীরু। কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গের আশ্রয় নেননি। তিনি সব সময় ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্য সরব হয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোনো তোষামোদের জন্য আসিনি, এসেছি পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য ভাগীদারিত্ব করতে। আর এখানেই তিনি সফল। তৃণমূল থেকে শুরু করে কলকে না পাওয়া কিছু সংখ্যালঘু সংগঠন তাকে হাজারো আক্রমণ করার পরও তার জনপ্রিয়তায়কে হ্রাস করতে পারেনি।
তার জনপ্রিয়তায় আরো কয়েকটি কারণ হল, তিনি কতকগুলি প্রশ্ন উথ্থাপন করেছেন। তার বক্তব্য, যে রাজনৈতিক দলটি পশ্চিমবঙ্গে ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে আলিঙ্গন করে ডেকে এনেছে, সেই তৃণমূল কী করে বলতে পারে , অমুক দল বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে জায়গা করে দিচ্ছে, অমুক দল বিজেপির টাকা খেয়েছে। যে দল বিজেপির নির্দেশে কংগ্রেসকে ভেঙে তৈরি হয়েছে, সেই তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা ব্যানার্জি বিজেপিকে আটকাবে? কেন তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা ব্যানার্জি মুসলিম এলাকায় তার রাজনৈতিক দর্শনের কথা না বলে কেবল হিজাব, ইনশাল্লাহ- মাশাল্লাহ করবেন? এটা কি এক ধরনের নাটক নয়? এই সহজ- সরল কথাগুলো তিনি যুক্তি সহকারে উথ্থাপন করেছেন। ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকীর এই চাবুকমারা কাট কাট যুক্তি গুলো সবার কাছে বলা যেতে পারে এক একটা আলোর ঝলকানি ।
বিখ্যাত সুফিসাধক হজরত আবু বকর সিদ্দিকীর ( রহঃ) উপমহাদেশে একজন চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। স্বাধীনতা সংগ্রামীও ছিলেন তিনি । তাই তার পঞ্চম পুরুষ ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকী পূর্বপুরুষের পথ অনুসরণ করেই সাধারণ পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা বলে সবার কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তাই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘ভাইজান’ পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী একটা স্থান করে নিয়েছেন। আব্বাস মানে এখন সাধারণ মানুষের ‘ভাইজান’ । আগামীতে তার জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকী এক প্রভাববিস্তারকারী হিরো । হ্যাঁ যথার্থই একজন ‘কিং মেকার’।
খুলনা গেজেট/এস আই