খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

লকডাউনের খবরে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে চিন্তার ভাজ

বিএম ওয়াসিম আরমান, মোংলা

করোনারভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (০৫ এপ্রিল) থেকে দেশব্যাপি লকডাউন শুরু হবে। এতেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে মোংলার নিম্নআয়ের মানুষ। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে চিন্তা আর হতাশা নেমে এসেছে।

মোংলা পৌর শহরের ইজিবাইক চালক আলমগীর বলেন, গতবার করোনার কারণে লকডাউনে চাকরি হারিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসি। ধার দেনা করে সমিতি থেকে লোন নিয়ে এই গাড়িটা কিনেছি। বর্তমানে এর উপরেই আমার সংসার চলে। যদি আবারো লকডাউন শুরু হয় তাহলে মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আমার হয়তো না খেয়ে মরতে হবে। তার উপর আবার প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। কি যে করবো মাথায় কিছু ধরছে না, সামনে রোজার মাস, রোজার বাজার করতে হবে। মা রোজা থাকে, আমার স্ত্রীও রোজা থাকে। এখন আল্লাহই আমাদের একমাত্র ভরসা।

স্বপন নামের চায়ের দোকানদার বলেন, লকডাউন আসলেই তো সবার আগে চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয়। আমার এই দোকানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। আর এই আয়ের উপর দিয়েই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার জীবন চলা। যদি দোকান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাবে।

বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হালিম বলেন, লকডাউনের কথা শোনার পর থেকেই রাতে ঘুমাতে পারি না। সামনে রোজার মাস খুব টেনশন হচ্ছে। গত বছরের লকডাউনে অনেক লোকসান হয়েছে । সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে ধার-দেনা করেছি। একইসঙ্গে ঋণ নিয়েছি রোজার মাসে ভালো ব্যবসা হবে সেই আশায়। কিন্তু লকডাউন শুরু হলে কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মোটরসাইকেল চালক বলেন, আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। গত লকডাউনে আমি চাকরি হারিয়ে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম। পরে বাড়িতে এসে সমিতি থেকে লোন করে এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। বর্তমানে এই মোটরসাইকেল দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করি। লকডাউন শুরু হলে আমি বড় বিপদে পড়ে যাবো। কারো কাছে হাত পেতে কিছু চাইবো মান-সম্মানের কারণে তাও পারবো না। তাছাড়া আমার মা খুব অসুস্থ প্রতিদিনই আমাকে ১৫০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। কি যে করবো মাথায় কিছু কাজ করছে না।

নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মানুষও। স্থানীয় এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বেলাল জানান, কোন চাকরি না থাকাতে কোচিং সেন্টারের চালিয়ে আসছি। এগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি করে যে ভাত খাব এই চিন্তাই করছি। কারণ আমরা কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে পারব না আর কেউ আমাদেরকে সাহায্য দিতে আসেও না। ঘরে বসে ধুকে ধুকে না খেয়ে মরা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় হবে না। তাই সরকারের উচিত করোনার সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি লকডাউন শিথিল করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার মনিটরিং করা যাতে সামনে রোজার মাসে মানুষ ডাল-ভাত খেয়ে হলেও বেঁচে থাকতে পারে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!