দৃক পিকচার লাইব্রেরির উদ্যোগে ‘কারারুদ্ধ চিরকুট ও অন্যান্য গল্প’ শিরোনামে একটি দশ দিনব্যাপী প্রদর্শনী চলছে। যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই ক্যামেরার পেছনের কিছু না জানা গল্প। যেখানে জমে আছে গেঁথে রাখা কষ্ট, হাহাকার, নির্যাতন, হাজারও প্রতিবন্ধকতা আর জমিয়ে রাখা না বলা কথা। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ যে ক্রান্তিকালীন সময় অতিবাহিত করছে তারই চিত্র ফুটে উঠেছে এই প্রদর্শনীতে।
দেশের কয়েকজন আলোকচিত্র সাংবাদিকের বয়ানে এই সময়ের কিছু গল্প নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে “কারারুদ্ধ চিরকুট ও অন্যান্য গল্প” শিরোনামে এই একটি প্রদর্শনীটি। গত ১০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫ টায় ঢাকার দৃক গ্যালারীতে এর উদ্বোধন করা হয়। চলবে আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত।
প্রদর্শনীর শুরুতে নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জে আওয়ামী লীগের অন্তর্দলীয় সংঘাতের খবর ধারণ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে হয়রানি-নিপীড়নমূলক মামলায় নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে মৃত লেখক মুশতাক আহমেদের সাহস ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রদর্শনীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সাংবাদিকরা যে ভয় ও প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করছেন সেই অভিজ্ঞতার পাশাপাশি করোনাকালীন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সঙ্কট নিয়ে গল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সংবাদকর্মীদের রোজ দিনকার কাজের ক্ষেত্রে যে ধরণের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন সে সমস্যারও চিত্রায়ণ করা হয়েছে, বিশেষ করে নারী আলোকচিত্র সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা নিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে ৩টি কাজ।
খুলনা থেকে ভিজ্যুয়াল জার্নালিস্ট নিপা মোনালিসার ‘অপরাজেয়’ নামক গল্প এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখনও পুরুষেরই। শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের জন্য যে পথ দেখিয়েছেন, সাংবাদিকতার সেই পথ অনুসরণ করে অনেক নারীই এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের এই যাত্রা সংগ্রামের। এমনই একজন সংগ্রামী আলোকচিত্র সাংবাদিক সাহানা পারভীন শিল্পীকে নিয়েই এই ‘অপরাজেয়’ গল্পটি।
এছাড়া প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সর্বমোট ১৩ জন আলোকচিত্রীর কাজ গুলো হচ্ছে- সাবিনা ইয়াসমিনের ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’, জয়ীতা রায়ের ‘আলোর মানুষ’, ফারজানা আক্তারের ‘স্মৃতি’, সুজাউল ইসলাম সুজার ‘ত্রিশূল’, আবু জাফরের ‘কারারুদ্ধ চিরকুট’, মনন মুনতাকার ‘স্থবির সময়’, নাজমুল ইসলামের ‘ছাঁটাই সংবাদ’, রাহাত করিমের ‘অতল শূন্যতা’, মোঃ আল মামুন জীবনের ‘ফেরারি পথ’, আব্দুর রায়হান জুয়েলের ‘৩৪ বছর’, একজন পাহাড়ি সাংবাদিকের ‘জলপাই নজর’ এবং সৈয়দ মাহফুজা মিষ্টির ‘৫.০০ টার সংবাদ’ (ঝালকাঠি থেকে সাংবাদিক আক্কাস শিকদারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিষ্টি এবং প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত ভিডিও চিত্রটি নির্মাণ করেছে দৃক পিকচার লাইব্রেরি)।
এ বিষয়ে দৃক নিউজের ঝালকাঠি প্রতিনিধি সৈয়দ মাহফুজা মিষ্টি বলেন, ’একজন সাংবাদিককে সত্য খবর প্রকাশের কারণে কিভাবে মামলা হয়রানিসহ প্রতিনিয়ত সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়, হুমকির মুখে থাকতে হয় তার একটা চিত্র এই স্টোরিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। একইভাবে ঝালকাঠি জেলার সাংবাদিক আক্কাস শিকদারকে সত্যি তুলে ধরার অপরাধে মিথ্যা হত্যা মামলার আসামীও হতে হয়েছিলো এবং প্রতিনিয়ত নানান চাপের মধ্যে থেকেও নিষ্ঠার সাথে, সাহসের সাথে যেভাবে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন তার চিত্র তুলে ধরেছি।’
তিনি বলেন, ’আমি অনেক আনন্দিত এভাবে বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরতে পেরে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দৃকের প্রতি, এতো সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য।’
উল্লেখ্য, প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল এবং আল মামুন জীবন তাঁদের নিপীড়নের অভিজ্ঞতার কথা বলেন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার সংগ্রামে সামিল হতে সকলকে আহবান জানান।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে দৃকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য সায়দিয়া গুলরুখ বলেন, একটি নিপীড়নমূলক আইন আর এক অদৃশ্য ভাইরাসের আগ্রাসন আমাদের মুখোমুখি করেছে এক ইতিহাস উত্তীর্ণ শ্বাসরুদ্ধকর সময়ের। এই সময়ের কিছু প্রত্যয়, শোক ও সংগ্রামের গল্প নিয়েই সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনীটি। দৃকের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে আলোকচিত্র সাংবাদিকদের গল্প বলার একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার, এই প্রদর্শনীটি সেই চেষ্টারই অংশ।
প্রদর্শনীটি আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নিচের লিংকটি প্রদর্শনীর অনলাইন ভার্সন-
https://artcon.com.bd/vr/drik/
খুলনা গেজেট/এনএম