রাজনীতিতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কিন্তু বারবার হয়। ১৯৭৭ সালে কংগ্রেসের এমারজেন্সি পিরিয়ড চালু করাই কি দলটার পতনের প্রধান কারণ ছিল? না, অবশ্যই না। ওই দলের যুবনেতা ইন্দিরা-তনয় সঞ্জয় গান্ধীর একগুঁয়েমি মনোভাব যদি হয় কংগ্রেসের পতনের প্রত্যক্ষ কারণ, তাহলে কংগ্রেসের অন্তর্ঘাত, অন্তর্দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠী কোন্দল, দলবদল, কংগ্রেসের ভাঙন দলটির ভরাডুবির আরেক কারণ। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষত্ব হল এটাই যে, তিনি ১৯৮০ সালে আবার স্বমহিমায় ওভারকাম করেছিলেন।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে কি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? অর্থাৎ সারদা-রোজভ্যালির মতো গলার কাঁটা থেকে মুক্ত পেতে দলবদল, তৃণমূলের অন্তর্ঘাত, অন্তর্দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠী কোন্দল, দলবদল, আর ব্রাকেটবন্দী তৃণমূল কি তৃণমূলকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যাবে? আর এইগুলি যদি তৃণমূলের পরাজয়ের প্রধান কারণ হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি তৃণমূলের পরাজয়ের আরেকটি প্রত্যক্ষ কারণ হবে। অভিষেকের একগুঁয়েমি ও দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি অশোভন আচরণ তৃণমূল দলের মধ্যে ভাঙনকে প্রসারিত করেছে। কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের এক সীমান্তবর্তী জেলায় গিয়েছিলাম। সেই জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পদত্যাগ করে দু-তিন জন নেতাকে নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন।
পরে জানা গেল, আগেরদিন রাতে সেই তৃণমূল সভাপতি তার অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করে বলেছেন, আমরা দু-চারজন বিজেপিতে সরাসরি চলে যাচ্ছি। তোমরা তৃণমূলে থেকে খাঁজ কাটো। অর্থাৎ রাজনৈতিক পরিভাষায় বলা যায় পশ্চিমবঙ্গে একটা তৃণমূল ব্রাকেট বন্দী, আরেকটি তৃণমূল সরাসরি বিজেপিতে যোগদানকারী যারা স্পষ্ট। এরা ব্রাকেট-মুক্ত। রাজনৈতিক দর্শনে বলা হয় ব্রাকেট মুক্তদের চেনা যায়। কিন্তু ব্রাকেটবন্দীরা সবচেয়ে ক্ষতিকারক ও বিপজ্জনক। এদের অন্তর্ঘাত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি বিধানসভা আসনে তৃণমূলের কিন্তু এই দশা। বলা ভালো শনির দশা। পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ বিধানসভা কিংবা ৩৪১ টি ব্লকে তৃণমূলের যে গ্রুপ মনোনয়ন পাননি তারা ব্রাকেটবন্দী তৃণমূলের কাজ করছে। আরেকটা অংশ সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিজেপির রয়েছে অঢেল পয়সা। রেজিমেন্টশন। সাংগঠনিক ক্ষমতা। ব্রাকেটবন্দী ও ব্রাকেটমুক্ত দুই তৃণমূলই এখন বিজেপির নিয়ন্ত্রণে। এটাই হবে তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি।
মমতা ব্যানার্জি লড়াকু নেত্রী, সাহসিনী। কিন্তু তিনি তো আর ইন্দিরা গান্ধী নন। ইন্দিরা গান্ধী ওভারকাম করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে ইন্দিরা কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসে পরিণত হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জি কি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে সামাল দিতে পারবেন? রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকরা মনে করছেন তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ মমতার হাতে আর নেই। আর এটাই মমতার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ট্রাজেডি ।
খুলনা গেজেট/এনএম