হাইকোর্ট বলেছেন, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠি ১৩ ঘণ্টা পর ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে পি কে হালদারকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
পি কে হালদারকাণ্ডে জড়িত আনান কেমিকেল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের শুনানির সময় আদালত এ কথা বলেন। ইন্টারনেটের যুগে চিঠি পাঠাতে এত সময় ব্যয় হওয়ার কড়া সমালোচনাও করেন আদালত।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী শুনানি করেন।
গত ১ মার্চ ইমিগ্রেশন পুলিশ হাইকোর্টকে জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশত্যাগ করেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।
ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দুদক ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানানোর জন্য বিশেষ শাখার (এসবি) সদর দফতরকে চিঠি দেয়, পি কে হালদার যেন দেশত্যাগ না করতে পারেন। এসবি সদর দফতর দুদকের ওই চিঠি হাতে পায় ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়। ওইদিন বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইমিগ্রেশন পুলিশের সব শাখায় চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে চিঠি পাওয়ার দুই ঘণ্টা ৯ মিনিট আগেই (বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে) পি কে হালদার বেনাপোল দিয়ে দেশত্যাগ করেন। অর্থাৎ পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির চিঠি পাওয়ার আগেই তিনি দেশত্যাগ করেন।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কীভাবে দেশত্যাগ করলেন তা জানতে চান হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে পি কে হালদার যেদিন দেশত্যাগ করেছিলেন, সেদিন বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতদের এবং দুদকের দায়িত্বে কে কে ছিলেন তার তালিকা দাখিল করতে বলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় পাড়ি দেন পি কে হালদার। দেশত্যাগের সময় পি কে হালদার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই