শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দিল্লির বিজ্ঞানভবন থেকে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন। এই পাঁচটি রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরালা, তামিলনাড়ু ও পদুচেরি (সাবেক পণ্ডিচেরি)। এই পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে পদুচেরি অবশ্যই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল । বাকি চার অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আট দফা, আসামে তিন দফা, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে একদফায় নির্বাচন হবে।
কেন্দ্র শাসিত তিরিশ আসন বিশিষ্ট পদুচেরিতেও এক দফায় ভোট হবে। ২৩৪ আসন বিশিষ্ট তামিলনাড়ু এবং ১৪০ আসন বিশিষ্ট কেরালায় বিধানসভা ভোট হবে কেবল এক দফাতেই। ১২৬ আসন বিশিষ্ট আসামে ভোট হবে তিনদফায়। কিন্তু ২৯৪ আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন হবে আট দফায়। শুধু দফা বা ফেজ বাড়ায়নি নির্বাচন কমিশন , পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী তারিখ ঘোষণার এক সপ্তাহ আগেই দিল্লি থেকে ২৩ টি জেলার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে টহলদারি দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারে। ভোটারদের মনে একটা আশার আলো সঞ্চারিত হতে পারে। খুব ভালো কথা। ভারতীয় নির্বাচন কমিশন অবশ্যই একটি স্বশাসিত সংস্থা। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে এই সংস্থাকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল গুপ্ত কমিশন। সেই কমিশন নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও ক্ষমতা প্রদানের জন্য কতগুলি সুপারিশ করেছিল যাতে এই সংস্থা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। নির্বাচনের আচরণ বিধি কমিশন ঠিকঠাক লাগু করতে পারে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন গুপ্ত কমিশনের সুপারিশ মেনেই কড়া হাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধিকে কার্যকর করে।
এবছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন আট দফায় হচ্ছে।কিন্তু তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কিছু প্রশ্ন উঁকি মেরেছে। তাদের বক্তব্য এই আট দফা ভোট করা মানেই কেন্দ্রের শাসক দল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগাবে এবং ভোটে একটি কারচুপি হবেই হবে। ইভিএম ভোটে সেই কারচুপি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে খুব সহজেই করা যাবে। যেটা ত্রিপুরাতে হয়েছি। ২০২০ সালের অক্টোবরে বিহারে গণনার সময় কারচুপি হয়েছে। সেই সম্ভাবনা পশ্চিমবঙ্গেও হবে। এই প্রশ্ন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল দলের যেমন, তেমনি বাম- কংগ্রেস জোটেরও। আবার একথাও সত্য স্হানীয় নির্বাচন যেমন পঞ্চায়েত, পুরসভা ও কর্পোরেশন নির্বাচনগুলি পরিচালনা করে রাজ্য সরকার গঠিত রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যত পঞ্চায়েত , পুরসভা ও কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে সেখানে শাসক তৃণমূল বিরোধীদের মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতে দেয়নি। তাই পশ্চিমবঙ্গের এবছরের বিধানসভা নির্বাচন আটদফায় করে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাতে ক্ষতি কী। তবে রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকরা মনে করেন যে, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলিকে খুব সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই