‘বাঘ বাড়াতে শপথ করি, সুন্দরবন রক্ষা করি’ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিবছরের ন্যায় ২৯ জুলাই পালিত হয় ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন উপকূলে নেই কোন কর্মসূচি। রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে পালিত হবে সীমিত পরিসরের কর্মসূচি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে জীববৈচিত্র রক্ষায় বাঘ আছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ একযোগে দিবসটি পালন করে। সূত্রমতে, সুন্দরবন এলাকায় কাজ করেন এমন লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিল বনবিভাগ। পরের বছর সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছিল।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৪ সালের গবেষণায় সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়েছিল; এতে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পায় বনবিভাগ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু করে। পর বছর ২০১৯ সালে ফলাফল প্রকাশে বলা হয়- সুন্দরবনের ১১৪টি বাঘ রয়েছে। তিন বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে ৮টি বাঘ বৃদ্ধির তথ্য দেয় বনবিভাগ। সর্বশেষ বাঘশুমারিতে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ চলাচল করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি পাওয়া যায়। পরে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সর্বশেষ এই জরিপে সুন্দরবনের ২৩৯টি জায়গায় গাছের সাথে ৪৯১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। ২৪৯দিন ধরে চালু রাখা ক্যামেরাগুলোতে বাঘের ২ হাজার ৫০০টি ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা, ১১৪টি বাঘ থাকার কথা অনুমান করেন। বাঘের প্রকৃত সংখ্যা বন বিভাগের কাছে নেই। দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনের প্রায় ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বশিরুল আল মামুন বলেছেন, বৈশ্বিক কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার খুলনা অঞ্চলে বাঘ দিবসের কোন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। ঢাকাতে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সর্বশেষ, গণনা অনুযায়ী সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে মৃত চলতি বছর একটি বাঘের মরাদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাছাড়া আর কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আপাতত সুন্দরবন চোরাশিকারী মুক্ত।’
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবন ও সকল বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হবে। অধিক লোভে একটি মহল বিশ্ব ঐতিহ্যের বাঘ হত্যা করে। এসব স্বার্থন্বেষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করলে বাঘের সংখ্যা বাড়তো, কমতো না ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার জানান, বাঘ রক্ষা ও তাদের বংস বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে সরকার। তাই বাঘ গননা জরিপ-২০১৫’র ফলাফলে দেখা গেছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালে জরিপে ১১৪টি বাঘের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে। তার মানে হলো বাঘের সংখ্যা আবার রাড়তে শুরু করেছে। বন্যপ্রাণী শিকারীদের ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এআইএন