খুলনায় প্রথমধাপে সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা ও ৫৫ বছর বা তদূর্ধ বয়সের সাধারণ মানুষের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে যেসব সম্মুখসারি জনগোষ্ঠি স্ব স্ব দপ্তরের মাধ্যমে এনআইডি নম্বর দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদেরও অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া ৫৫ বছর বা তদুর্ধ বয়সের ইচ্ছুক সাধারণ মানুষদের সরাসরি অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রথমধাপের অনলাইনে আবেদনের শেষ সময় ৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হলেও টিকা নিতে ইচ্ছুকদের অনলাইন আবেদনে রয়েছে প্রচুর ধীরগতি। অনলাইনে আবেদন করা বাধ্যতামূলক এ বিষয় জানে না অনেকেই। এছাড়া অনলাইনে বা সুরক্ষা অ্যাপে আবেদন করার কথা বলা হলেও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমধাপের আওতাভুক্ত সম্মুখসারির জনগোষ্ঠির নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের নাম নির্ধারণ করতে স্ব স্ব দপ্তর থেকে তালিকা নেয়া হয়েছে। তালিকাভুক্তদের এনআইডি নম্বর সার্ভারে ইনপুট করার জন্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সম্মুখসারির মধ্যে তালিকায় অন্তর্ভুক্তরা ছাড়া অন্য কেউ অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া ৫৫ বছর বা তদূর্ধ বয়সের সাধারণ জনগণের যে কেউ সুরক্ষা ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তবে অনলাইনে আবেদনে ধীর গতি রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
এদিকে অনলাইনে নিবন্ধনের কথা বলা হলেও প্রতিটি উপজেলা থেকে অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই তালিকায় যারা নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তারা নিজেরা নিবন্ধন করবেন কি না, তা তাদেরকে পরিষ্কার করে বলা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া উপজেলা থেকে পাঠানো তালিকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের বিষয়েও পরিস্কার করা হয়নি। তাছাড়া ‘সুরক্ষা’ নামক একটি অ্যাপের মাধ্যমে করোনা টিকার নিবন্ধন করা যাবে বলা হলেও এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি অ্যাপটি। তবে এখন সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। টিকা নেওয়ার পর অল্পসংখ্যক মানুষের সামান্য জ্বর দেখা দিয়েছে, এমন তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছেও আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও করোনাবিষয়ক মুখপাত্র মোহাম্মদ রোবেদ আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, সামান্য জ্বর হওয়ার কথা আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এমন মানুষও সংখ্যায় অনেক কম।
এ বিষয়ে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খুলনা গেজেটকে বলেন, তালিকাভুক্ত সম্মুখসারির জনগোষ্ঠিরও নিজেদের এনআইডি এবং মোবাইল নম্বর যুক্ত করে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া ৫৫ বছর বা তদূর্ধ ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে টিকা প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে নিবন্ধনের জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচরণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। আর নিবন্ধনের শেষ সময়ের বিষয়ে আমরা এখনও কোন চিঠি পাইনি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি।
যেভাবে নিবন্ধন করবেন
প্রথম ধাপের জন্য ২৭ জানুয়ারি থেকে অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস ব্রিফিং সূত্রে জানা গেছে।
নিবন্ধন করতে এখানে ক্লিক করুন:
অনলাইনে মোট ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি সিলেক্ট করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে।
* প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করা হবে। সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে। ওই নম্বরে পরবর্তীতে সকল তথ্য এসএমএস করা হবে।
* মোবাইল নম্বর দেয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে। সেখানে নিবন্ধনকারীর দীর্ঘমেয়াদী রোগ বা কো-মরবিডিটি আছে কি না তা জানাতে হবে। আর যদি রোগ থাকে, তাহলে সেটির নাম উল্লেখ করতে হবে।
* সেখানে আরেকটি ঘর থাকবে। পেশা এবং তিনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কিনা, তা জানাতে হবে।
* তারপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক, তার অপশন নির্ধারণ করতে হবে।
* ফরম সেভ করলে নিবন্ধনকারীর দেয়া মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি কোড পাঠানো হবে এবং সেই কোড দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হবে।
* এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে অ্যাপে আবারও লগইন করতে হবে। এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে হবে।
* এরপর ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।
* এসএমএসে প্রাপ্ত তারিখ অনুযায়ী ভ্যাকসিন কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।
* এভাবে দুটি ডোজ নেয়া শেষ হলে সুরক্ষা ওয়েবসাইট থেকে সনদ দেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই