ঢাকায় প্রথম দুটি ম্যাচে জিতলেও ব্যাটিংয়ে খুব একটা স্বস্তি ছিলো না টাইগার শিবিরে। চট্টগ্রামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে সোমবার নিজেদের যোগ্যতা দেখালো তামিম,সাকিব,মাহমুদুল্লাহ,মুশফিকরা । এর মাঝে মাহমুদুল্লাহ চড়াও হয়ে ব্যাট চালিয়ে ক্যারিবিয়ানদের সামনে গড়লো রানের পাহাড় । সেই রানের পাহাড়ে চড়তেই মোস্তাফিজুরের আঘাত। দ্বিতীয় ওভারে দলীয় মাত্র ৭ রানের সময় শুরু হয় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের প্যাভিলিয়নে ফেরা, এরপর সাইফুদ্দিন, মিরাজ এক এক করে আঘাত হেনে এলোমেলো করে দেয় ক্যারিবিয়দের ব্যাটিং লাইন। শেষ পর্যন্ত ওঃ ইন্ডিজ ১৭৭ রান তুলতেই সবকটি উইকেট হারায়। ফলে টাইগিাররা নিজ দেশে এবার তোদের হোয়াইট ওয়াশ করলো। এর সাথে বাংলাদেশের খাতায় ৩০ পয়েন্ট জমা পড়লো।
বাংলাদেশ এদিন দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। হাসান মাহমুদ এবং রুবেল হোসেনকে বিশ্রামে পাঠানো হয়েছে। তাদের জায়গায় খেলছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং তাসকিন আহমেদ। তাসকিন ৩ বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন।
বোলিংয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে সাফল্য দেখালো মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের জোড়া আঘাতে ফিরে গেছেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার সুনীল আমব্রিস ও কিওর্ন ওটলি। এরপর কাইল মেয়ার্সকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুর ধাক্কার পর উইকেটে শতরান রান তুলতে ধুঁকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের ৭ রানের সময় ওটলি ১ রান নিয়ে মোস্তাফিজের শিকারে পরিনত হন। মোস্তাফিজের অপর শিকার অ্যমব্রোস ১৩ রান করেন।ঢাকায় প্রথম ২ ম্যাচে না খেলা সাইফুদ্দিন এসেই পান সফলতা, সফরকারী দলের ৮৭ রানের সময় তিনি তুলে নেন রানের খাতা না খোলা জেসন মোহাম্মদের উইকেট। এবার ৩১ রান করা বোনারকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত করেন সাইফুদ্দিন। দলের শতরান পূর্ণ করতেই তাদের ৫ উইকেটের পতন হয়।
৩৮ ওভারে ওঃ ইন্ডিজের রান তোলার গড় ছিলো ৩’৭৭, রেকর্ড রান ছিলো ওভার প্রতি ১৩’৭৩। ব্যাটিংয়ে থাকা দলটির স্বস্তি ছিলো তখন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব চোট পেয়ে ড্রেসিং রুমে বিশ্রামে ছিলেন। উইকেটের একপ্রান্তে পাওয়েল বেশ থিতু হয়ে পড়ে থেকে রানের চাকা ঘুরাচ্ছিলেন, যদিও ওভার প্রতি টানের টার্গেট শুধু রাড়তে থাকে। এ সময় অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার এসে পাওয়েলকে ফেরৎ পাঠান দলীয় ১৫৫ রানের সময়। পাওয়েল ৪৯ বল মোকাবেলা করে ৪৭ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হন। ধীরে ধীরে ক্যারিবিয়ানদের জয়ের প্রদীপ নিভতে থাকে। এরপর আর কোন ব্যাটসম্যান দাড়াতে পারেনি টাইগার বোলারদের সামনে। দলের ১৭৩ রানে ৭ম উইকেটের পতন হয়। জোসেপ ১১ রানে রানআউট হন। টাইগার পেসার সাইফুদ্দিন শেষ আঘাত হানে ওঃ ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনে। ৪৪’২ ওভারে ১৭৭ রানে থেমে যায় তাদের রানের চাকা। আবারও তারা তামিদের কাছে হোয়াইট ওয়াশের শিকার হন। বাংলাদেশের পক্ষে সাইফুদ্দিন ৩, মোস্তাফিজুর ও মিরাজ ২ করে উইকেট পান।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে চার সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অর্ধশতক পেয়েছেন। তাতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ২৯৭ ।
দ্বিতীয় ম্যাচের পর শেষ ওয়ানডেতেও অর্ধশতক হাঁকান তামিম ইকবাল। শুরুতে দুই সতীর্থকে হারালেও তামিম অভিজ্ঞতার প্রমাণ রাখেন। ২৮তম ওভারে ফেরার আগে ৮০ বলে ৮০ স্ট্রাইকরেটে ৬৪ করে যান। এর মধ্যে চারের মার তিনটি, ছয় একটি।
অধিনায়ক হিসেবে ৬ ওয়ানডেতে তার দ্বিতীয় ফিফটি এটি। আর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অষ্টম। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরিও আছে দুটি।
তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন আর তামিম যখন শুরুর ধাক্কাটা সামলে ওঠার চেষ্টায়, ঠিক তখনই কাইল মায়ার্সের বলে সেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েই বিদায় নেন নাজমুল। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২০।
চার নম্বরে নেমে সাকিব করেন ৫১। ৮১ বলে তিন চারে এই রান করেন সাকিবের সঙ্গে ৯৩ রানের জুটি গড়া এই অলরাউন্ডার। পাঁচ নম্বরে নামা মুশফিকও পেয়েছেন অর্ধশতক। ১১৬ স্ট্রাইকরেটে তিনি ৫৫ বলে ৬৪ করে যান।
চার সিনিয়রের তিনটি জুটিতেই ভালো রান উঠেছে। তামিম ফেরার পর মুশফিক-সাকিব করেন ৪৮।মুশফিকের সঙ্গে আবার ৭২ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। তার স্ট্রাইকরেটও (১৪৮.৮৪) ভালো ছিল। তিনি ৪৩ বলে ৬৪ করে অপরাজিত থাকেন।
ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম ও সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন