বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমরণ অনশন করে যাচ্ছে খুবি’র দুই শিক্ষার্থী। বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (১৭ ব্যাচ) এই দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মেনে আত্মপক্ষ সমর্থন অথবা একাডেমিক কাউন্সিলে আপিল করার জন্য গত দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক কয়েক দফা আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে এখন পর্যন্ত অনড় রয়েছে।
এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো, শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তিনজন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই তিন শিক্ষক হলেন, বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, একই ডিসিপ্লিনের শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী।
ঐ তিন শিক্ষককে আলাদা আলাদা পত্রে বলা হয়েছে, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য, কুৎসা রটানো এবং উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে অন্যান্য শিক্ষকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো থাকার পরও তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করেছেন।”
অপসারণের কথা জানিয়ে এই তিন শিক্ষককে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তাদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নোটিশে আরো বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেন অপসারণ করা হবে না, আগামী ২১ জানুয়ারির মধ্যে তা জানাতে হবে।
দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও তিন শিক্ষকের অপসরণ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর ব্যানারে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা করেছে।
এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খুবির প্রকৃত ঘটনা না জেনে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বা বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন সম্মানিত শিক্ষকের সাথে দুইজন শিক্ষার্থীর অসদাচারণের অভিযোগ তদন্ত শেষে সম্প্রতি শৃঙ্খলা বোর্ড বিভিন্ন মেয়াদে তাদের শাস্তি প্রদান করে। এই শাস্তি প্রত্যাহারে ঐ দুই শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। শাস্তি প্রত্যাহারে বা শাস্তি কমানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাতান্ত্রিক পথ রয়েছে। কিন্তু তারা এ পথ অনুসরণ করে আবেদন করছে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক কয়েক দফা ঐ শিক্ষার্থীদ্বয়ের কাছে যেয়ে পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন তাদেরকে সঠিক পথ অবলম্বনের পরামর্শ দিলেও তারা তা গ্রহণ করে নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের সাথে অসদাচারণ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। অপর দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতি মুক্ত। এ ঐতিহ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দলমত নির্বিশেষে আপামর খুলনাঞ্চলের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমের শুরু থেকেই লালন করে আসছে। কিন্তু সে বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে এবং প্রকৃত ঘটনা না জেনে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যান্যারে বিবৃতি প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোপূর্বে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদানের কারণ উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ঘটনার প্রকৃত তথ্য বা কারণ না জেনে বিবৃতি প্রদানের ফলে যেমন একপেশে তথ্য পাওয়া যায়, তেমনি তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ থাকে। এমতাবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত শিক্ষার্থীদ্বয়ের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জ্ঞাত হয়েই বিবৃতি বা মন্তব্য প্রদান সমীচীন বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে।
খুলনা গেজেট/ এমএইচবি