সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় তৃতীয় দিনের মত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। বুধবার (২০ জানুয়ারি) সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য রেকর্ড করেন। বৃহস্পতিবার বিবাদীপক্ষ আদালতে তাদের অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থপান করে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত মুখার্জী, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা, সাতক্ষীরা জজ অঅদালতের পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি এ্যাড. এসএম হায়দর, সাবেক পিপি এ্যাড. ওসমান গনি প্রমুখ।
অপরদিকে বিবাদীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ্যাড. শাহানারা আক্তার বকুল, এ্যাড. আব্দুল মজিদ, এ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু ও এ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন তোজাম।
রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে ২০ জন সাক্ষীর জবানবন্দী পৃথক পৃথকভাবে তুলে ধরেন। এসময় বলা হয় সাক্ষীদের জবানবন্দীতে এই মামলার অভিযোগ পুরোপুরি প্রমানিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দী পর্যালোচনা করে বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার জন্য বিভিন্ন রকম চেষ্টা করে। কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সংঘটিত শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তারই অংশ। তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচার হলে আসামীরা প্রত্যেকে দোষী প্রমানিত হবেন এবং সর্বোচ্চ সাজা পাবেন।
অপরদিকে, বিবাদীপক্ষের আইনজীবি আব্দুল মজিদ মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের মামলার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, এর মধ্যে তথ্যগত অসংলগ্নতা ও অসংগতি রয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দীতে আসামীরা কোনভাবেই দোষী প্রমানিত হয়নি। কয়েকটি ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পরামর্শ ও নির্দেশ মোতাবেক তার অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক স্থাপন বুধবারের মত অসমাপ্ত থাকে। বৃহস্পতিবার বিবাদীপক্ষ তাদের অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গতঃ ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষিতা এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে আসেন। হাসপাতাল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উলেখ পূর্বক অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উলেখ করে ৩০ জনকে স্বাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শেখ সফিকুল ইসলাম। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই