সকাল থেকে মাথার মধ্যে এলোমেলো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ পবিত্র শুক্রবার থেকে নতুন ইংরেজি সন ২০২১ শুরু হয়েছে। বিদায় নিয়েছে ২০২০। এই যে গেল একটি বছর, তার চেয়ে খারাপ বছর আমাদের জীবনে কম এসেছে। সমগ্র পৃথিবীর জন্য ২০২০ সালের মত প্রাণঘাতী বছর আর ছিল কিনা জানা নেই। করোনা ভাইরাস নামক এক অদৃশ্য শত্রু মানবসভ্যতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। আর এ থেকে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ মুক্ত নয়। তবে আজ সকালে অনেক এলোমেলো ভাবনার মধ্যে এও মনে আসলো পবিত্র শুক্রবার দিয়ে নতুন বছর শুরু হয়েছে, আর শুক্রবার দিয়েই নতুন বছর শেষ হবে। কারণ চলতি বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বরও শুক্রবার।
এসব নিয়ে যখন ভাবছি তখন আমার কলেজ জীবনের সহপাঠী ফোন করে জানতে চাইলেন, সাংবাদিক হিসেবে নতুন বছর নিয়ে কি ভাবছি? পাল্টা তার কাছে জানতে চাইলাম, তার ভাবনা কি? আমার বন্ধুটি গোগ্রাসে যেটি বললো তার সারমর্ম এরকম, গত বছর করোনার কারণে তার ব্যবসা একেবারে মন্দা গেছে। ছেলেটি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো, কিন্তু সেখানে চাকরি ছাটায়ের কারণে সে বেকার এবং নাতনি তৃতীয় শ্রেনীতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য লটারি পদ্ধতির দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম মনখারাপ করোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের উপর যেমন একদিকে আল্লাহর রহমত আছে, অপরদিকে সরকারের সময়মত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আমরা পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় করোনাকালেও ভালো আছি।
চলতি বছরের প্রথম দিনে নিজের আত্মসমালোচনা করার বেশি দরকার বলে মনে হয় আমার কাছে। বিদায়ী বছরে আমি করোনাকালীন সময়ে কতজনকে সহযোগিতা করতে পেরেছি। আমার দ্বারা কেউ উপকৃত হয়েছে কিনা। একই সাথে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আমরা যারা অনেকের চেয়ে ভালো আছি তারা কি মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছি?
গত বছর করোনার কারণে একদিকে যেমন অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বিষয়ে পাশ করা তরুণ-তরুণী চাকরি না পেয়ে নতুন বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বেতন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যাংকে নিট মুনাফা কমেছে। কমেছে জামানত। ধাক্কা লেগেছে রেমিট্যান্সেও।
একটি বছর শিক্ষাঙ্গনে বলার মত কোন সাফল্য ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ার টেবিলে বসেছে কিনা সকলের জানা। করোনার কারণে ১০ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
করোনা প্রতিরোধের টিকা আসি আসি করে এখনো আসে নাই। সব রকম শিল্প প্রতিষ্ঠান খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। করোনার ধাক্কায় দারিদ্রের হার বেড়েছে। আয়বৈষম্যও বেড়েছে। এতো কিছুর পরও সুখের কথা পদ্মা ব্রিজ আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। অনেক দেশের তুলনায় সরকারের বাস্তব ও সময়পোযোগী পদক্ষেপের কারণে আমরা অন্যান্য দেশের কাছে রোল মডেল হয়েছি।
এমন জগদ্দল পাথরের মতো করোনাকে মাথায় নিয়ে সমগ্র পৃথিবীর মত বাংলাদেশকেও পা ফেলতে হলো ২০২১ সালে। বদলে যাওয়া পৃথিবীর অন্য দেশের মত বাংলাদেশকে এই বছরটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। অথর্, বাণিজ্য, শিক্ষা, জীবন-জীবিকা, কর্মসংস্থান, শিল্প-সাহিত্য ও ক্রীড়াসহ সকল দিকে বড় বড় চ্যালেঞ্জ যত ভালোভাবে মোকাবিলা করা যাবে ততোই উত্তম। এবিষয়ে শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর তাতেই সমৃদ্ধ হবে দেশ। আর আমরা পাবো একটা উন্নত বাংলাদেশ।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন