মুর্শিদাবাদের কাবিলপুর অঞ্চলের শেষ ‘পন্ডিত’ মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন তিনি। বয়স হয়েছিল সরকারি কাগজ অনুযায়ী ৯১ বছর। এলাকার অনেকের মতে একশোর কম হবে না। রেখে গেলেন তিন পুত্র এবং তিন কন্যা। স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছেন বছর তিনেক আগে।
বৃটিশ আমলে এবং পরবর্তীতে যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন তাঁদের পন্ডিত বলা হতো। সরকারি ভাবে বলা না হলেও জনমানসে সেটাই ছিল রেওয়াজ। সেই নিয়মে কাবিলপুর অঞ্চলে ৪৭ পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকজন ‘পন্ডিত’ ছিলেন। লাল মহম্মদ পন্ডিত, মেসের পন্ডিত, সাইফুদ্দিন পন্ডিত, আফজাল পন্ডিত এবং আরও বেশ কিছু। একে একে সবাই চলে গিয়েছেন অনেক আগেই। বেঁচে ছিলেন তাঁদের শেষ প্রতিনিধি বাসির পন্ডিত। আবদুল বাসির বিশ্বাস।
শিক্ষা বিভাগের দলিল অনুযায়ী বাসির পন্ডিত এর জন্ম ১৯৩০ সালে। পাঁচ বছর বয়সেই পিতা উমেদ আলী বিশ্বাসকে হারান। চাচা সামেদ আলী বিশ্বাস এর তত্ত্বাবধানে মানুষ হন। রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছর লালাগোলা মহেশ নারায়ণ একাডেমি ( এম এন একাডেমী ) থেকে স্কুল ফাইনাল পাস করেন। তারপর রাজশাহী থেকে আই এ পাস করেন। পরবর্তীতে কান্দি বেসিক ট্রেনিং স্কুল থেকে বেসিক ট্রেনিং কোর্স অর্জন করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে গৌরিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কয়েকবছর পর বদলি হয়ে আসেন কাবিলপুরের মথুরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৯৫ সালে অবসর গ্ৰহণের আগে পর্যন্ত সেখানেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
৪৭ পরবর্তী সময়ে কাবিলপুর অঞ্চলে এক ঝাঁক শিক্ষিত,সমাজ সচেতন যুবকের উত্থান ঘটে। সকলেই নিজ নিজ পেশার সাথে সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইসলামী চিন্তা চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে উদ্যোগ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন কাবিলপুর যুব সংঘ, ইসলামী পাঠাগার। এসব কর্ম কান্ডে সক্রিয় সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেন সাংসদ জয়নাল আবেদীন, প্রাথমিক শিক্ষক সিরাজুদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষক জিল্লার রহমান, নূর মোহাম্মদ প্রমুখ। এ সব তরুণ শিক্ষক সমাজকর্মীদের পিছনে অভিভাবকদের ভূমিকা যাঁরা পালন করেছিলেন বাসির পন্ডিত ছিলেন তাঁদের অন্যতম। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আশাদুল্লাহ জানালেন “বক্স মাষ্টার কালকে বলছিলেন, তাঁরাও দু’বছর মামার ছাত্র ছিলেন” । কাবিলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথমদিকে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হতো। সেখানে জিল্লার রহমান, নূর মোহাম্মদ এরা বাসির পন্ডিত এর কাছে দু’ক্লাস পড়েছিলেন। দু’জনাই অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষক। তাঁর অনেক ছাত্র কর্মজীবন শেষে অবসর গ্রহণ করেছেন এবং অনেকেই কর্মজীবনে আছেন।
জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন এলাকার ইমাম বিশিষ্ট আলিম ও শিক্ষক মোঃ ফাইজুদ্দিন। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ‘রঙধনু’ সম্পাদক জয়নূল আবেদিন, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সভাপতি হাসিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ডঃ মিনারুল সেখ ,অল ইন্ডিয়া ইমাম কাউন্সিলের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আবদুত তওয়াব সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি।
খুলনা গেজেট/এনএম