ইনজুরি পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই তাকে আটকে রাখতে চেয়েছে; পারেনি। করোনা মহামারিতে ছিলেন বিপর্যস্ত। রাজনৈতিক ব্যস্ততায় ছিল না দম ফেলানোর ফুরসত। মাঠে নামার সব পথগুলোতে যেন পড়ছিল দাড়ি। তবুও জেদ ছিল। শুরু করলেন একক অনুশীলন। বলা হচ্ছে মাশরাফি মুর্তজার কথা।
১০ কেজি ওজন কমিয়ে হয়েছেন ঝরঝরে। কিন্তু শুরুতেই এসেছিল ধাক্কা। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের আগেও পড়েন ইনজুরিতে। হ্যামস্ট্রিং চোটে আবার বাধা। টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন কিনা সেই শঙ্কা জেগেছিল। তবে ইনজুরি সামলে শেষভাগে ফিরেছেন ম্যাশ। প্রথম দুই ম্যাচে দুই উইকেট নিয়ে ছিলেন মিতব্যয়ী। লাইন ও লেন্থ ঠিক রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল বেশি। কিন্তু ফিরে পাচ্ছিলেন না ছন্দ। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে এবার তিনিও ফিরলেন ছন্দে। এবার পেলেন ৫ উইকেট। তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যা সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফী অবসর নিয়েছেন ২০১৭ সালে। তবে ঘরোয়া আসরগুলোতে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ যা করলেন সেটি করতে পারেননি কখনোই। পড়ন্ত বয়সে করলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মাশরাফীর দল জেমকন খুলনার প্রতিপক্ষ গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। আসরের সবচেয়ে সফল দলটি। পুরো আসরে দুর্দান্ত ছন্দে দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকারও। তবে এদিন এদের কবল থেকে দলকে উদ্ধার করেন মাশরাফী। নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান সৌম্যকে।
২য় ওভারে এসে ফেরান লিটন দাসকেও। ব্যক্তিগত ৩য় ওভার করতে এসে ফেরান উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া মাহমুদুল হাসান জয়কে। তবে চমকটা দেখিয়েছেন নিজের শেষ ওভারে। উইকেট তুলে নিয়েছেন শামসুর রহমান শুভ ও মোস্তাফিজুর রহমানের।
সবমিলিয়ে ম্যাচে ৩৫ রানের বিনিময়ে মাশরাফীর উইকেট ৫টি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগে কখনোই ৫ উইকেট পাননি ম্যাশ। ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১৫ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মাশরাফি দুইবার ৪ উইকেট পেয়েছেন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেলফাস্টে ১৯ রানে পেয়েছিলেন ৪ উইকেট। ২০১৮ সালের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১১ রানে উইকেট পেয়েছিলেন ৪টি। এবার সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেলেন। পড়ন্ত বয়সে সব ছাড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক।
৩৭ বছর ৭০ দিনে মাশরাফির নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কী? জানতে চাওয়া হয়েছিল ম্যাচ শেষে। মাশরাফি উত্তর দিলেন এভাবে, ‘কোনও রহস্য নেই সাফল্যের। শুধু ভালো জায়গায় বল করে যাওয়া, এটাই। গত ৮-৯ মাস ক্রিকেট খেলা সহজ ছিল না। আমার জন্য আদর্শ ছিল না। তবে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। শুধু নিজের জায়গায় বল করে যাওয়া, এটাই আমি অনেক বছর ধরে করে আসছি। এটাই আত্মবিশ্বাসের একমাত্র কারণ বলা যায়। আমি ঠিক জায়গায় বল করে যেতে পারি। বাকি যা হওয়ার তা তো হবেই।’
পাশাপাশি নিজের মানসিক শক্তির কথা আলাদা করে বললেন জেমকন খুলনার পেসার, ‘ক্রিকেট মানসিকতার খেলা। তবে সময়টা কঠিন ছিল। করোনা পজিটিভ হওয়া সহজ ছিল না। আমি ফিট হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এরপর আমি হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ি। আমি লেগে ছিলাম। আত্মবিশ্বাস ছিল এই টুর্নামেন্টটা খেলতে পারবো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এটাই হয়েছে। এরপর কিছু উইকেট পাওয়ায় নিজে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।’
খুলনা গেজেট / এমএম