বুধবার । ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২রা পৌষ, ১৪৩২
দু’বছর আগে খুন হয় ছোট ভাই রমজান

রূপসায় গুলিতে নিহত সাগর যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী, হত্যাসহ ১৯ মামলার আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সাগর শেখ যশোরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। যশোরে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকসহ ১৯টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে আমাদের যশোর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে সাগরের ছোট ভাই রমজান শেখও চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল। তাকে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শহরের রেলগেট এলাকায় দুর্বৃত্তরা খুন করে। এর আগে সাগর শেখ একটি হত্যা মামলায় কারাগারে ছিল। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে রূপসা এলাকায় অবস্থান করছিল। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ৪-৫ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিহতের মা রেখা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হলেও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যরা আসামিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে নিহতের ময়নতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হাসপাতাল থেকে মরদেহ প্রথমে রূপসার বাড়ি এবং পরে দাফনের জন্য গোপালগঞ্জ নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। গত রবিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্ব পাশে সিএনজি স্টেশনের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে মাদক কারবারী সাগর শেখ নিহত হয়। সে জাবুসা গ্রীন বাংলা আবাসিক এলাকার পেছনে বসবাসকারী ফয়েক শেখের ছেলে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সাগর শেখ মাদক কারবারী ছিল। সে সদ্য র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার চিংড়ি পলাশের অন্যতম সহযোগী। শান্ত স্বভাবের যুবককের পাশাপাশি সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল যা এলাকাবাসী কখনও ভাবতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

এলাকার একটি সূত্র জানায়, কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য ঘটনার রাতে স্ত্রী ও ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে খুলনায় মার্কেটিংয়ের জন্য আসে। হত্যার আগে দুর্বৃত্তরা তাকে অনুসরণ করতে করতে ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনাস্থল জনমানব শূন্য থাকায় সুযোগ বুঝে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর দু’টি গুলি করে। একটি গুলি তার মাথায় অপরটি পায়ের হাটুতে বিদ্ধ হয়। ঘটনাটি তার স্ত্রী সমনে হলেও তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। মাটিতে সাগর শেখ লুটিয়ে পড়লে একটি ভ্যানে চারজন ব্যক্তি তাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই এলাকার একটি সূত্র আরও জানায়, সাগরদের পৈত্রিক নিবাস গোপালগঞ্জ। সে গোপালগঞ্জের প্রথম ভোটার হয়ে পরবর্তীতে যশোর এবং সর্বশেষ রূপসার জাবুসা এলাকায় ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। বিভিন্ন জেলায় তার নিজস্ব বাড়ি আছে। তার আচারণ এলাকার মানুষের কাছে সন্দেহজনক ছিল বলে ওই সূত্রটির দাবি।

র‌্যাব-৬ এর মেজর নাজমুল ইসলাম বলেন, পুলিশের পাশাপাশি আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করেছি। খানজাহান আলী (রঃ) সেতু থেকে সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। গুলি করার পর সাগরকে বহনকারী ভ্যানের এবং ওই পরিবহনে থাকা চারজনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে খুব শিগগিরই আমরা তাদের সন্ধান পেয়ে যাব।

পুলিশের একটি সূত্র জানায় সাগরের ছোটভাই রমজান হত্যা মামলার আসামিরা সম্প্রতি জামিনে কারগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। তারাও এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে ওই সূত্রটি মনে করে। প্রতিবেশিরা জানায়, বছর খানেক আগে যশোর থেকে রূপসা এসে গ্রীন বাংলা আবাসিক এলাকার পিছনে বাড়ি করে বসবাস করতে থাকে।

রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক মীর বলেন, সাগর শেখ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সোমবার নিহতের মা থানায় দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪-৫জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত কার্যক্রম সামনের দিকে নেওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। পরে সবকিছু জানানো হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন