রবিবার । ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

খুলনাকে নিরাপদ করতে নতুন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

অভ্যুত্থান পরবর্তী ১৬ মাসে খুলনায় হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। খুলনা নগরীতে ৪৮ এবং জেলায় আরও ৪৭ মোট ৯৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যা নামলেই নগরীতে নেমে আসে আতঙ্ক। পুলিশের তথ্য বলছে, সক্রিয় অন্তত ছয়টি সন্ত্রাসী বাহিনী এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

আইনশৃখলা পরিস্থিতির অবনতিতে সমালোচনা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলি হায়দার। নতুন পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান। সদ্য যোগদান করেছেন জেলা প্রশাসক আ স ম জামসেদ খোন্দকার এবং জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাই এখন তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ এ দু’কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে খুলনা থেকে চরমপন্থী উৎখাতে জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিজেদের শতভাগ সৎ দাবি করে অবৈধভাবে দখল করা জলকর দখলমুক্ত করা, ইটভাটা উচ্ছেদসহ সকল প্রকার আর্থিক অনৈতিক লেনদেন শক্ত হাতে দমনের আশ্বাস দেন।

জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে খুলনা জেলায় ৪৭টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় চারজন, কুপিয়ে ও গুলি করে ২৬ জন, অজ্ঞাত কারণে ১১ জন, শ্বাসরোধ করে ২ জন এবং বাকি পরকীয়ার কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বলছে, গত ৫ আগস্ট থেকে শুরু করে খুলনা শহরে ৪৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে, যা ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী ১ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এসব হত্যা মামলায় দেড়শতাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৬ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এসব আসামির কাছ থেকে রাইফেল দুটি, বিদেশি রিভলভার পাঁচটি, বিদেশি পিস্তল ১৭টি, দেশি পিস্তল একটি, বন্ধুক ১টি, দুটি কাটারাইফেল, পাঁচটি পাইপগান, তিনটি শাটারগান উদ্ধার করা হয়েছে।

গত পাঁচ মাসে মহেশ্বরপাশা এলাকায় ঘটে চারটি খুন। ১১ জুলাই যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা খুন, ৩ আগস্ট ঘের ব্যবসায়ী আলামিন হাওলাদার খুন, ১ অক্টোবর তানভীর হাসান শুভ খুন ও ২ নভেম্বর ভুলবশত গুলিতে এমদাদুল হক নিহত হয়।

৩০ নভেম্বর মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিন-দুপুরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় দুই যুবক হাসিব হাওলাদার ও ফজলে রাব্বি রাজনকে। এর ১৪ দিন আগে করিমনগরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে খুন করা হয় আলাউদ্দিন মৃধাকে। একই দিন লবণচরায় দুই শিশু ও তাদের নানীকে ভাড়াটে খুনির হাতে প্রাণ হারাতে হয় জমি বিরোধের জেরে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫০ মরদেহ। এসবের অনেকগুলোর পরিচয় আজও অজানা। আইন-শৃখলার চরম অবনতি মাথায় নিয়ে সকল দপ্তরে নতুন কর্মকর্তারা যোগদান করেছেন। গত মঙ্গলবার একই দিন দুপুরে সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক আ স ম জামসেদ খোন্দকার এবং বিকেলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। দু’কর্মকর্তাই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন করা হবে। দুর্নীতি রোধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ সুপার বলেন, কোন শক্তি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে না। অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী দমনে পুলিশের নানা কৌশল ব্যবহার করা হবে। খুলনাকে শান্ত নগরীতে পরিণত করতে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তারা খুলনাকে নিরাপদ করতে যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তাতে সফল হবেন, এমন প্রত্যাশা নগরবাসীর।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন